অগ্নি (মুভি রিভিউ)

যেহেতু ভ্যালেন্টাইনস ডে, তাই শঙ্কা ছিল সিনেমা হলে অধিকাংশই জোড়ায় জোড়ায় থাকবে । তাই বন্ধুকে বোরকা পরিয়ে হলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বন্ধুকে এই..

এরশাদোলজি (রম্য)

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নারীদরদীয়া প্রেমিক পুরুষ আলহাজ হোমিওপ্যাথিক এরশাদ ওরফে পল্টিবাদি লাফাইন্যায়ে ডিগবাজীকে নিয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। আজকের আলোচনা অজ্ঞানে বিজ্ঞানে সজ্ঞানী এরশাদ।

ফেসবুকে প্র্তারনার হাত থেকে সতর্কতা

আপনার অনেক পরিচিত কারো ফেইক আইডি খুলে আপনাকে হয়ত ফাদে ফেলানো হবে, আপনার গার্লফ্রেন্ড, আপনার বন্ধু সেজে আপনাকে ফাদে ফেলানো হবে। আর লুল বালক হলে তো কথায়ই নেই, মিষ্টি কথাতেই আপনার ঘুম হারাম করে দেবে।

ইশি (ছোটগল্প)

বিল্ডিং গুলোর ছুটে চলা খুব উপভোগ করছে ইশি। কিন্তু একটু পরেই বিল্ডিং গুলো দৌড় থামিয়ে দিল। এই জ্যাম একদম ভাললাগেনা ইশির। সবকিছু কে থামিয়ে দেয়। তবে পথের নোংড়া ছেলেমেয়ে গুলো জ্যাম কে খুব ভালবাসে।

আজব প্রশ্নের গজব উত্তর

প্রশ্নঃ দেশে জনসংখ্যা কমানোর জন্য কি কি করা যায়? উত্তরঃ বিবাহ করা থেকে নারী পুরুষ কে বিরত থাকার জন্য উদবুদ্ধ করতে হবে। স্বামী স্ত্রীর বিছানা আলাদা করা যায়। বিছানা এক হলেই মহামারী দেখা দেবে এমন আতঙ্ক ছড়ানো যায়

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৫

আশিকি (মুভি রিভিউ)



বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবারও সিদ্ধান্ত নিলাম হলে গিয়ে সিনেমা দেখবো। একা একা যেতে ইচ্ছা করছিল না তাই আঁখিকেও রাজী করিয়ে ফেললাম। তো আমরা দুজন যৌথভাবে দেখতে গেলাম যৌথ প্রযোজনার ছবি আশিকি।

যৌথ  প্রযোজনার এদেশী কলাকুশলী বলতে নুসরাত ফারিয়া, মৌসুমী এবং রেবেকা রউফ। আর বাকি সব ভারতীয় প্রতিনিধিদের মাঝে অঙ্কুশ, রজতাভ দত্ত, অরিন্দম দত্ত, সৌরভ দাস ছিলেন। ও হ্যা কয়েকটা সাদা ও কালো চামড়ার মানুষও ছিলেন যাদের নাম আমাদের বলা হয়নি :-/

 শুরুতে দেখা গেল রাহুলের (অঙ্কুশ) এক বন্ধু সাঙ্গপাঙ্গো নিয়ে রাহুল কে আক্রমন করতে গেল। কিন্তু রাহুলের ইমোশনাল ডায়লগে সাঙ্গপাঙ্গো সহ রাহুলের বন্ধুও গেল গলে। তারা এতই ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিল যে আমাদের চোখ দিয়েও দু'ফোটা জল বেরিয়ে যায় যায় অবস্থা। আরে ব্যাটা ডায়লগের সাথে এক্সপ্রেশনের তো মিল রাখবি?
জোর করে মানুষ হাসানোর চেষ্টা করলে তো সিনেমাই "হাঁস" মারবে আফ্রিদির মত।

নায়ক দর্শন যেহেতু হলো তাই ফরমেট অনুযায়ী এবার নায়িকা দেখার পালা। মেয়েদের কত না "বিচিত্র" জায়গায় ট্যাটু করতে দেখি, কিন্তু আমাদের নায়িকা ট্যাটু করেছেন পায়ে। যাক এটা কোনো ব্যপার না। যেহেতু নায়কের দৃষ্টিতে নায়িকার পা কে হাইলাইট করা হয়েছে তাই লাভ এট ফার্স্ট সাইটের মতো একে "লাভ এট লেগসাইট" বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়।

এবার নায়িকার টার্ন। একটা ডাবল ডেকার বাসের দোতলা থেকে এক বাচ্চা পুতুল নিয়ে  খেলতে খেলতে
সেটা তার হাত থেকে পড়ে যায়। নায়ক সেই পুতুল নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চলন্ত বাসের বাচ্চার হাতে পৌছে দেয়। পুরো ব্যপারটি নায়িকা নায়কের পেছন দিক থেকে অবলোকন করে। এবং এতেই সে ফিদা হয়ে যায় এবং বিয়ের ক্ষিধা পেয়ে যায়। সে তখনই দেশে ফোন করে জানিয়ে দেয় এই ছেলেকেই বিয়ে করবে। হাউ সুইট! এ তো "লাভ এট ব্যাকসাইট"। সব ছেলের "ব্যাক সাইড" দেখে যদি মেয়েরা প্রেমে পড়তো তাহলে দুনিয়াটা কতই না সুন্দর হত।

পরিচালক সাহেব এবার হিস্টরি রিপিটস উক্তির বারংবার ব্যবহার করে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের কাহিনীই কপি পেস্ট করা শুরু করলো। নায়িকাকে হাত ধরে ট্রেনে তোলা, নায়ক নায়িকার ট্রেনের একই কম্পার্টমেন্টে অবস্থান যখন মনে করিয়ে দিচ্ছিল কোথায় যেন দেখেছিলাম এ কাহিনী। নায়ক তখন নিজেই জানিয়ে দিলো "আরে মিয়া এত ভাবার কি আছে? এ তো দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের কাহিনী। হিস্টরি রিপিটস"। আমাদের দেশের ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে বড়জোর সিগারেটের পশ্চাদ্দেশ, কলার বস্ত্র ইত্যাদি থাকে। কিন্তু লন্ডনের ট্রেনের ফাকা কম্পার্টমেন্টে মেয়েদের "অন্তর্বাসও" পাওয়া যায়।

অন্তর্বাস আসলো কই থিকা সেই চিন্তা বাদ দিয়ে আবার সিনেমায় মনোযোগ দিলাম। তখন নায়িকার এক স্বল্পবসনা ফ্রেন্ড তাদের কম্পার্টমেন্টে ঢুকে পড়লো। কিন্তু নায়ক কে দেখেই এমন মুচড়ামুচড়ি শুরু করলো যে আমি ভাবলাম তার স্বল্পবসনের ভিতর কেউ মে বি তেলাপোকা অথবা "মোরগ( :-P ) " ঢুকিয়ে দিয়েছে।

পুরো সিনেমায় শুধু কো ইন্সিডেন্সের ছড়াছড়ি। যেভাবেই হোক যেকোনো সিচুয়েশনেই নায়ক নায়িকার দেখা হয়ে যাচ্ছে। ওয়েলস থেকে ফেরার পথে আবার নায়ক নায়িকার পাশাপাশিই সিট পড়লো। নুসরাত ফারিয়া ক্ষুধার্থ হয়ে যখন বললো "আই অ্যাম হাংরি" তখন সেটা আমরা ভুল করে অন্যকিছুও শুনে ফেলতে পারি। তাই ফারিয়া যেন পরবর্তীতে বাক্যটি বলার সময় একটু স্পষ্টতা অবলম্বন করে। নায়িকা ক্ষুধার ঠেলায় ট্রেন থেকে নেমে খাবার খুজতে গিয়ে ট্রেনই মিস করে ফেলল। আর তখন লেডি এন্ড জেন্টস  গুন্ডা মিলে নায়িকাকে আক্রমন করলো। নায়িকার উপর আক্রমন হলে নায়ক সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এসে নায়িকাকে বাচাবে। আমাদের নায়কও চলন্ত ট্রেন থেকে এসে নায়িকাকে বাচিয়েছেন। রাত  টা তারা একটা বাড়িতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো। এখানেই এসে হিস্টরি ব্রেক করলো। নায়ক নায়িকা দুজনই ড্রিংক্স করে মাতাল হয়ে দুজন দুজন কে কিস করার জন্য উদ্যত হলো। এই কিসের দৃশ্যটাই সিনেমার বেস্ট সিন ছিল। এই মূহুর্তে পাশ থেকে আঁখি আমাকে বললো সব ডান। আঁখির সব ডান বলার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম যখন নায়িকাকে চাদর পড়ে সোফায় বসে থাকতে দেখলাম। আমি এত টিউবলাইট ক্যান? :-P আমি বুঝিনা এই কাজ ডানের পর নায়িকারা কেন চাদর জড়িয়ে বসে থাকে? :-P

যাক অবশেষে তাহাদের প্রেম হইলো। যেহেতু প্রেম হইলো সেহেতু ঘাপলা তো একটা থাকবেই। ঘাপলা টা হলো নায়িকার ভাই এককালে নায়কের বোন মৌসুমীকে উত্ত্যক্ত করতো। একারনে তিনি নায়কের হাতে প্যাদানিও খেয়েছেন। যেহেতু নায়কের ভাইয়ের হাতে উনি প্যাদানি খেয়েছেন তাই তিনি এ প্রেম মেনে নেবেন না স্বাভাবিক। নায়ক একারনে তার পাঞ্জাবী ফ্রেন্ড কে পাঠায় নায়িকার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে। সবই ঠিক ছিল কিন্তু নায়িকার ভাইয়ের এসিস্ট্যান্স কে দেখে আমার মনে হলো উনি পাইলসের রোগী। পরিচালক জোর করে মানুষ হাসানোর জন্য এই পাইলসের রোগীর ব্যবহার করেছেন, যে কিনা ফাইল হাতে দাঁত কেলিয়ে অধিকাংশ সময় অর্ধ হামাগুড়ি টাইপ অবস্থায় থাকেন।

এ সিনেমার এক পর্যায়ে নায়িকার ভাই গাড়ি নিয়ে নায়ক কে তাড়া করে। নায়কের গাড়িতে তখন নায়িকা মওজুদ। তিনি রিয়েল কার চেজিং এর মজা নিচ্ছিলেন। কিন্তু দুইটা গাড়িরই তেল এক পর্যায়ে ফুরিয়ে যায়। এসময় দুইটা গাড়ির দুরত্ব বড়জোর ১০০ মিটার ছিল। কিন্তু নায়িকার ভাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে নায়কের গাড়ির উদ্দেশ্যে সেই যে দৌড় শুরু করলেন আর থামাথামি নাই। ১০০ মিটার দৌড়াইতে ৩-৪মিনিট লাগে নাকি?? মনে হয় তিনি একটু করে দৌড়িয়ে হাপিয়ে গিয়ে আবার নিজের গাড়ির কাছে ফিরে গিয়ে রেস্ট নিয়ে আবার দৌড় শুরু করছিলেন। এই ফাকে নায়ক গাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে তেল ভরে আবার গাড়িতে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আরেক দৃশ্যে দেখা গেল নায়ক মুখে আঘাত পেয়ে নায়িকার বাড়িতে হাজির। তিনি দুই হাত দিয়ে নায়িকার ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে হসপিটালে গেলেন। কিন্তু ডাক্তার সাব তার মুখ বাদ দিয়ে হাতেই ব্যান্ডেজ করে দিলেন। মানে লন্ডনের ডাক্তাররা অনেক আগে থেকেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে ডাক্তার হন। হুদাই আমরা ১৫ ব্যাচ আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীরে পঁচাই।

আরেকটা দৃশ্যে নায়িকার ভাই বিলাতী ভিলেনের হাতে মার খেয়ে পড়ে থাকে। নায়ক যায় তার শালাবাবুকে বাচাতে। কিন্তু এড্রেস তো জানেনা। তাই ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে সে নির্দিষ্ট এলাকায় পৌছায়, কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছাতে পারেনা। কিন্তু রাস্তায় ৪বিলাতী গেরুয়া পোশাক পরে ঢোল ডুগি নিয়ে লন্ডনের রাস্তায় হরে কৃষ্ণ জপতে ছিল। ব্যপারটা যদি ভারতীয়দের দিয়েও করা হত তবুও মানানসই ছিল। এদিকে ভিলেন কয় "রাহুল এখনো আসেনা ক্যান?" আরে ব্যাটা তুই কি টেলিপ্যাথির মাধ্যমে নায়ক রে আইতে কইছস? যাই হোক নায়ক হর্ন টিপে ভিলেনের আস্তানায় পৌছালো (হর্ন টিপে কেমনে পৌছাইলো ব্যপার টা আমার মাথার উপর দিয়া গেল)।

সিনেমাটায় যত জায়গায় গাড়ি কিংবা ট্রেনের ভিতর থেকে বাইরের দৃশ্য ধারন করা হয়েছে ততবারই স্পষ্ট বোঝা গেছে সেই মান্ধাতার আমলের প্রজেক্টর আর পর্দার সিস্টেম এপ্লাই করা হয়েছে। এই ডিরেক্টর এত ফাকিবাজ ক্যান? একেতো শুরুর দিকে হিস্টরি রিপিটস বলে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের কপি পেস্ট করা শুরু করেছিল, আবার গাড়ির দৃশ্যগুলাও প্রজেক্টর দিয়ে সারছে। ফাকিবাজি আসলে গোড়াতেই। সিনেমাটা তেলেগু "ইশক" সিনেমার নকল। এই ইশক সিনেমার অনুকরনে ২০১৪ সালে ঢালিউডে লাভ স্টেশন নামে একটা সিনেমা হয়েছিল। মানে কপির উপ্রে কপি। প্রশ্ন ফাঁসের এই যুগে এসব কপি পেস্ট জায়েজ আছে। বিভিন্ন পন্যের গায়ে লেখা থাকে "নকল হইতে সাবধান"। কিন্তু বাংলা সিনেমা গুলোর যা অবস্থা তাই প্রচারনার সময় পোস্টার এবং ট্রেইলারে "আসল হইতে সাবধান" লেখাটা যুক্ত করা জরুরি।

সিনেমায় প্রেম হয়ে যাওয়ার পর নায়ক নায়িকার একে অপরকে "তুই" সম্বোধন করে কথা বলাটা সাবলীল হয়নি। আমার মনে হয় প্রেমের সম্পর্কে "তুই তুকারির" ব্যপার টা ঠিক যায়না। যাওয়াতে হলে অনেক হার্ড ওয়ার্কের প্রয়োজন আছে।

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো যেহেতু যৌথ প্রযোজনার সিনেমা এটা, তাই দর্শক খুজবে এতে নিজের দেশের প্রেক্ষাপট কতটুকু আছে? কলাকুশলী কতজন আছে? কিন্তু এ ব্যপারটাতে জাজ পুরোপুরি ব্যর্থ। সিনেমায় আমি বাংলাদেশকে খুজে পায়নি। যদিও যৌথ প্রযোজনায় এমন কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই যে উভয় দেশের প্রেক্ষাপট থাকতে হবে, কলাকুশলী থাকতে হবে। কিন্তু সিনেমা তো দর্শকদের জন্যই। এখন দর্শক যদি যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় নিজের দেশকে না পায় তবে সেটা যৌথ প্রতারনাই হবে। সিনেমায় তো বাংলাদেশের কোনো প্রেক্ষাপটই নেই। কলাকুশলী বলতে মাত্র তিন টা নারী চরিত্র। মৌসুমীর মত গুনী অভিনেত্রীকে পর্দার সামনে খুব বেশি আনাই হয়নি।

এবার কিছু ভালো দিক বলা যাক। সিনেমার গান গুলো ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে ভালোই লেগেছে। কোরিওগ্রাফিও খারাপ না। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের ব্যবহৃত লোকেশন গুলো ভালো ছিল। আর সবচেয়ে ভালো ব্যপার হলো সিনেমাটা নকল। এতে করে আমি আমার পাশে বসে থাকা বন্ধুকে সিনেমার পরবর্তী সিন গুলো আগে আগে বলে দিয়ে অবাক করে দেয়ার অফুরন্ত সুযোগ আছে :-P

 
Tricks and Tips