অগ্নি (মুভি রিভিউ)

যেহেতু ভ্যালেন্টাইনস ডে, তাই শঙ্কা ছিল সিনেমা হলে অধিকাংশই জোড়ায় জোড়ায় থাকবে । তাই বন্ধুকে বোরকা পরিয়ে হলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বন্ধুকে এই..

এরশাদোলজি (রম্য)

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নারীদরদীয়া প্রেমিক পুরুষ আলহাজ হোমিওপ্যাথিক এরশাদ ওরফে পল্টিবাদি লাফাইন্যায়ে ডিগবাজীকে নিয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। আজকের আলোচনা অজ্ঞানে বিজ্ঞানে সজ্ঞানী এরশাদ।

ফেসবুকে প্র্তারনার হাত থেকে সতর্কতা

আপনার অনেক পরিচিত কারো ফেইক আইডি খুলে আপনাকে হয়ত ফাদে ফেলানো হবে, আপনার গার্লফ্রেন্ড, আপনার বন্ধু সেজে আপনাকে ফাদে ফেলানো হবে। আর লুল বালক হলে তো কথায়ই নেই, মিষ্টি কথাতেই আপনার ঘুম হারাম করে দেবে।

ইশি (ছোটগল্প)

বিল্ডিং গুলোর ছুটে চলা খুব উপভোগ করছে ইশি। কিন্তু একটু পরেই বিল্ডিং গুলো দৌড় থামিয়ে দিল। এই জ্যাম একদম ভাললাগেনা ইশির। সবকিছু কে থামিয়ে দেয়। তবে পথের নোংড়া ছেলেমেয়ে গুলো জ্যাম কে খুব ভালবাসে।

আজব প্রশ্নের গজব উত্তর

প্রশ্নঃ দেশে জনসংখ্যা কমানোর জন্য কি কি করা যায়? উত্তরঃ বিবাহ করা থেকে নারী পুরুষ কে বিরত থাকার জন্য উদবুদ্ধ করতে হবে। স্বামী স্ত্রীর বিছানা আলাদা করা যায়। বিছানা এক হলেই মহামারী দেখা দেবে এমন আতঙ্ক ছড়ানো যায়

শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সেদিন বৃষ্টি ছিল | ভৌতিক নয়, কৌতুক সিনেমা | মুভি রিভিউ

ইদানিং বাংলাদেশের কিছু কিছু  সিনেমার পোস্টারে "ডিজিটাল সিনেমা" "রেড ক্যামেরায় নির্মিত সিনেমা" "প্রথম অমুক সিনেমা" "ব্যয়বহুল সিনেমা" ইত্যাদী কথাবার্তা বিশেষ ভাবে লেখা থাকে। যখনই এসব লেখা চোখে পড়ে তখনই বুঝে নিতে হবে ঘাপলা আছে। হলে নতুন সিনেমা আসছে "সেদিন বৃষ্টি ছিল"। এটার পোস্টারে আবার বিশেষ ভাবে লেখা আছে "দেশের প্রথম ডিজিটাল ভূতের সিনেমা"। আমি ভাবছিলাম ডিজিটাল ভূত হয়তো কোনো প্রোডাকশন হাউজের নাম। পোস্টারের আরেকটা বিশেষত্ব হল বিশাল একটা কঙ্কাল টাইপ মাথা বসায়া ভৌতিক ব্যপার স্যপার ফুটায়া তোলা হইছে।

ভৌতিক ব্যপার স্যপার টা কেমন তা দেখতে চলে এলাম সিনেমা হলে। সিটে বসার পর পাশের জন বলল, "ভাই পোস্টারের ভূত দেইখাই সিনেমা দেখতে চইলা আইছি"। তারে কইলাম, "ভূত তো যে সে দেখতে পারে না, আপনার চোখে নাও পড়তে পারে" ওমনি "ক্য্য্য্য্য্য্যা" করে একটা সাউন্ড হওয়ায় পাশের জন নেচে উঠলো। আহ সাউন্ডেই বুঝা গেল আইজ সেই লেভেলের ভৌতিক সিনেমা উপভোগ করতে যাইতেছি। সিনেমার দুই তিন মিনিটের মাথায় শুরু হইলো মাইর পিট। বহুদিন পর বাংলা সিনেমার মাইর পিটে ঢোল তবলার বাড়ি শুনলাম। সিনেমা ডিজিটাল হইলেও অতীত ভুলেনাই।

সিনেমার প্রযোজক, গল্পকার এবং নায়িকা হওয়ার সুবাদে রত্নার কিঞ্চিৎ মেদ যুক্ত শরীর দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারন দর্শক জানে তারা ভূতের সিনেমা দেখতে এসেছে ;-) । ভূতের সিনেমায় মুখ নড়বে সাউন্ড হবেনা আবার সাউন্ড হবে মুখ নড়বে না এই বিষয়টাকে স্বাভাবিক ধরে ডাবিং এর ত্রুটিটাকে হজম করে নিলাম। নায়িকা একজন ছাগল প্রেমী। নায়কের সাথে পরিচয়ও এই ছাগল কেন্দ্রীক। নায়কের কোটি টাকার গাড়ির মাঝেই নায়িকার ছাগল দুইটা নাদুস নুদুস ছাগলের বাচ্চা প্রসব করলো কোনো রকম ম্যা ম্যা ডাক ছাড়াই।

নায়িকার সাথে নায়কের বিয়ে হওয়ার পর তারা তাদের পুরাতন জমিদার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সিনেমার অনেক খানি হয়ে গেছে, আমাদের চোখও ভূত দেখার জন্য নিশপিশ করছিল। যাক এবার বুঝি সুযোগ পাওয়া গেল। জমিদার বাড়িতে আইসা কাউয়া দেখলাম বিলাই দেখলাম কিন্তু ভূতের দেখা এখনো পাইলাম না। হঠাত হঠাত  জমিদার বাড়ির একটা স্টিল ছবি দিয়া আর জোরে "ক্য্য্য্য্যা" কইরা একটা সাউন্ড দিয়া পরিচালক মনে করাইয়া দিতেছিল "ভয় নাই এইটা ভূতের ছবি"। এইভাবেই শেষ হল ভূত বিহীন ভৌতিক প্রথম পর্ব।

বিরতির পর সাদা শার্ট আর পায়জামা পরা নরম চেহারার এক সুদর্শন যুবক এসে ধরলো দু:খের গান, শিল্পী মনির খান। সাদা পোশাক দেখে ধরে নিলাম এইটাই মেবি ভূত। নায়িকা একবার ছাদে কাপড় চোপড় তুলতে গিয়ে এই নিরীহ চেহারার ভূত টাকে দেখে ভয়ে চিল্লায়ে কান ঝালাপালা করে ফেলল। এত জোরে চিল্লানি দিছে যে ভূত ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আর পরিচালক তো মাঝে মাঝেই জমিদার বাড়ির স্টিল ছবি আর ক্যা কু চিৎকুর থেরাপী দিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিল এটা ভৌতিক ছবি।

নায়িকার উপর যেহেতু ভূতের আছড় হয়েছে তাই ওঝার ব্যবস্থা করা হল। ওঝা আসার আগেই নায়িকার মাঝে ভূত ভর করে নায়কের গলা টিপে উচু করে ধরলো। গলা টিপে উচু করে ধরা যেন তেন নায়ক পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকলো। যেই কেবল দিয়ে নায়ক কে ঝোলানো হয়েছিল সেটা মুছতে গিয়ে নায়কের শার্টের কলারও খেয়ে ফেলছে এডিটর সাহেব।  ওঝা এসে অবশেষে ভূত কে শান্ত করলো। কিন্তু এই ব্যাটা খালি "লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোলেমিন" এই এক দোয়া পড়ে "পুফ" শব্দ করে ফুঁ দিয়ে তার ওঝাগিরির কারিশমা দেখাতে লাগলেন। নায়িকা রত্না কোথায় গেল তা জানা যায়নি তবে ওঝার কারিশমায় বিছানায় ভূত কে শুয়ে থাকতে দেখা গেল।

সুদর্শন ভূত এবার ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে তার ভূত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করতে লাগলো। মানতেই হবে ভূতের ব্রেইন যথেষ্ঠ শার্প। এই ভূত হল সিনেমার আরেক নায়ক যার নাম বিশাল। ফ্ল্যাশব্যাকের কাহিনীতে দেখা গেল বিশাল কলেজের পরীক্ষা পেছানোর জন্য পিঠে ছুরি খেয়ে পরীক্ষার হলে পড়ে আছে। আর বিশালের বন্ধুরা পুলিশ সেজে এসে প্রিন্সিপালকে ভয় দেখাচ্ছে। এই পুলিশ গুলার কারো প্যান্টের চেইন খোলা, কারো মুখে এক খাবলা আলগা দাড়ি, কারো দৈত্যের শিং এর মতো নাকের দুই পাশ দিয়ে গোঁফ, কেউ আবার এক পায়ে স্যান্ডেল এক পায়ে জুতা, কেউ আবার পাঞ্জাবীর উপর পুলিশের পোশাক পরে চলে এসেছে। সম্ভবত স্কুলের কোনো নাটকে পারফর্ম করতে যাচ্ছিল তাদের ধরে আনা হয়েছে।

বিশাল ভূত হয় এই জমিদার বাড়িতে পিকনিক করতে এসেই। বৃষ্টিভেজা রাতে জমিদার বাড়ির ছাদে বিশাল নায়িকাকে ভালো বাসার কথা বলবে। অতি উত্তেজনায় সে আই লাভ ইউ বলতে গিয়ে পিছলা খেয়ে ছাদ থেকে পড়ে গেল। এই মর্মান্তিক ঘটনা দেখেও দর্শক হো হো করে হেসে দিলো। এই কারনেই ভূতের রাগ বেশি। এদিকে বিশাল মরে ভূত হওয়ার পর গাড়ি এক্সিডেন্টে নায়িকার মেমোরির কিছু কিছু ফাইল ডিলেট হয়ে গেল যার ভিতর বিশাল ফাইলও ছিল। ভাগ্যিস পুরা ফর্মেট হয়নাই।

ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বাস্তবে ফিরে আসার পর দেখা গেল নায়িকা ছাদে হাটাহাটি করছে। সেই সময় বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টিতে ভিজেই নায়িকার অতীতের কথা বিশালের কথা মনে পড়ে গেল। আগে দেখতাম স্মৃতি হারায় বাড়ি খাইয়া আবার স্মৃতি ফিরেও বাড়ি খাইয়া, আর এখন দেখতেছি বৃষ্টির ফোটাতেই স্মৃতি ফিরে আসে। ভূত তাড়ানোর জন্য ওঝা একটা তাবিজ দিয়েছিল। কিন্তু নায়িকা স্বপ্নেই সেই তাবিজ খুলে ফেলল। আর যায় কই, তাবিজ নাই, ভূত কি এখন তোমারে ছাড়বো চান্দু? ভূত ছাড়েনাই, নায়িকারে উপরে তুলতেই আছে তুলতেই আছে। কাহিনী হইলো নায়িকারে শূন্যে ভাসালো ঠিক আছে, কিন্তু যেই কেবল দিয়া উঠাইলো সেই কেবল মুছতে গিয়ে পিঠে উপর থেকে বাকি অংশের বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা বানিয়ে ফেলল। আরে বাপ, শূন্যে ভাসানোর দৃশ্য যদি চিত্রায়নই না করতে পারিস তবে কি দরকার সেই দৃশ্য রাখার?

তবে শেষ দৃশ্যে ভাললাগছে ভূতের সাথে নায়কের মারামারি, এক বার ভূত নায়করে মাইরা কাইত কইরা ফালায় আরেকবার নায়ক ভূতরে মাইরা উল্টায়া ফালায়। ভূতের লগে কিল ঘুসি লাত্থি গুতা চলতেই থাকে। শেষমেশ নায়িকা ভূতের পা চেপে ধরে অনুরোধ করে নায়ক কে ছেড়ে দিতে। এই ভূত নামেই ভূত। সে বৃষ্টির পানিতে ভিজে, মানুষের সাথে মারামারি করে, চেহারাতেও ভৌতিকতা নেই, আবার মন টাও নরম। নায়িকার অনুরোধেই সে নায়ক কে ছেড়ে দিল। বিটিভিতে আগে শক্তিমান নামে একটা সিরিয়াল হইতো। ভূত সেই সিরিয়ালের শক্তিমানের মত ঘুরান্টি দিয়া শূন্যে ভেসে বিদায় নিল। এই সিনেমার একেকটা শূন্যে ভাসার দৃশ্য মাস্টার পিস। যেই শূন্যে ভাসে, তারই পিঠের উপরে পিরামিড, পিরামিডের উপরের রশি মোছার বৃথা চেষ্টা, আর যে ঝোলে তার পুরো শরিরের অবস্থা দেখে মোটেও এইটারে ভৌতিক ব্যপার মনে হয়না।

আসছিলাম ভৌতিক সিনেমা দেখতে, কিন্তু সিনেমার একেকটা দৃশ্য দেখে মনে হয় কৌতুক সিনেমা। পাশের জন একটা কঙ্কালের মাথা দেইখা চইলা আইছিল। আহারে বেচারা :-/
কঙ্কালের চুল টাও দেখতে পেল না। পুরা সিনেমায় ডাবিং এর যথেষ্ঠ সমস্যা ছিল। অভিনয় বিরক্তিকর। আড়াই ঘন্টার সিনেমায় ভূতের উপস্থিতি ১৫মিনিটের বেশি না,  কিন্তু তাকেও আমাদের ভূত বলে ধরে নিতে হবে, এমনিতে দেখে বোঝা যাবে না। ভৌতিক সিনেমা হলেও ভয়ঙ্কর কিছু নেই। আর ঝোলাঝুলির দৃশ্যগুলা ছিল হাস্যকর। আমার কাছে এইটারে ভৌতিক সিনেমা মনে হয়নাই, কৌতুক সিনেমা মনে হইছে।

 
Tricks and Tips