অগ্নি (মুভি রিভিউ)

যেহেতু ভ্যালেন্টাইনস ডে, তাই শঙ্কা ছিল সিনেমা হলে অধিকাংশই জোড়ায় জোড়ায় থাকবে । তাই বন্ধুকে বোরকা পরিয়ে হলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বন্ধুকে এই..

এরশাদোলজি (রম্য)

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নারীদরদীয়া প্রেমিক পুরুষ আলহাজ হোমিওপ্যাথিক এরশাদ ওরফে পল্টিবাদি লাফাইন্যায়ে ডিগবাজীকে নিয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। আজকের আলোচনা অজ্ঞানে বিজ্ঞানে সজ্ঞানী এরশাদ।

ফেসবুকে প্র্তারনার হাত থেকে সতর্কতা

আপনার অনেক পরিচিত কারো ফেইক আইডি খুলে আপনাকে হয়ত ফাদে ফেলানো হবে, আপনার গার্লফ্রেন্ড, আপনার বন্ধু সেজে আপনাকে ফাদে ফেলানো হবে। আর লুল বালক হলে তো কথায়ই নেই, মিষ্টি কথাতেই আপনার ঘুম হারাম করে দেবে।

ইশি (ছোটগল্প)

বিল্ডিং গুলোর ছুটে চলা খুব উপভোগ করছে ইশি। কিন্তু একটু পরেই বিল্ডিং গুলো দৌড় থামিয়ে দিল। এই জ্যাম একদম ভাললাগেনা ইশির। সবকিছু কে থামিয়ে দেয়। তবে পথের নোংড়া ছেলেমেয়ে গুলো জ্যাম কে খুব ভালবাসে।

আজব প্রশ্নের গজব উত্তর

প্রশ্নঃ দেশে জনসংখ্যা কমানোর জন্য কি কি করা যায়? উত্তরঃ বিবাহ করা থেকে নারী পুরুষ কে বিরত থাকার জন্য উদবুদ্ধ করতে হবে। স্বামী স্ত্রীর বিছানা আলাদা করা যায়। বিছানা এক হলেই মহামারী দেখা দেবে এমন আতঙ্ক ছড়ানো যায়

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০১৪

দুটি মনের পাগলামী | আড়াই ঘন্টার বিরক্তি | মুভি রিভিউ


প্রতি সপ্তাহে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার জন্য আমার নাকি কুখ্যাতি আছে। সেই কুখ্যাতি টা ধরে রাখতে আবারও সিনেমা হলে চলে গেলাম "দুটি মনের পাগলামি" দেখতে।

সিটে বসার আগেই পর্দার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এটিএম শামসুজ্জামান লাঠি দিয়ে আটার বস্তা পেটাচ্ছে। বস্তা পিটানির তালে তালে ক্যামেরাম্যান যেই আকারে ক্যামেরা কাপায়া নিয়া বেড়াইতেছিল তাতে আমি নিশ্চিত ক্যামেরা ম্যান ব্যাটা থুড়থুড়া বুইড়া আছিল। ওইত্তেরী এইডা তো আটার বস্তা না! এইডা তো সিনেমার নায়িকা! হুদাই নায়িকারে আটার বস্তা ভাইবা "মিশটেক" করি ফেলেছি। আর যেন "মিশটেক" না হয় তাই সতর্ক দৃষ্টি রাখা শুরু করলাম। সতর্ক দৃষ্টি দিয়া দেখলাম ঠোটে লিপস্টিক ওয়ালা পোলার আবির্ভাব হইল(এক লিপস্টিক ওয়ালারে নিয়াই বাচিনা, আবার আরেকটার আমদানী) । এইবার ক্যামেরাম্যান রে নিয়া আরেকদফা সন্দেহ করলাম। নায়িকার ঠোট একবারও জুম করেনাই কিন্তু নায়কের ঠোট বারবার জুম করতাছে X(

একটু পরে দেখি আরেক নায়কের আবির্ভাব আর মাশাআল্লাহ এইটার ঠোটে মনে হয় এক স্টিক লিপস্টিক পুরাই লেইপা দিছে। শালার সবকয়ডারে নিয়াই সন্দেহ হইতাছে। প্রথম নায়ক নায়িকারে হাতিরঝিলে নিয়া গিয়া গান শুরু করলো "মন থাকেনা আর ঘরে"। মন ক্যাম্নে ঘরে থাকবে? বাংলা সিনেমার মন তো এখন হাতির ঝিলে। প্রত্যেকটা সিনেমায় এই এক জায়গা দেখতে দেখতে চোখে অসুখ হইয়া গ্যাছে। গান শেষ হওয়ার পর শুরু হইল হাডুডু খেলা, নায়িকা এইবার গ্রামে। প্রথম নায়কের কাহিনী হাতিরঝিলেই শেষ। এইবার শুরু দ্বিতীয় নায়কের কাহিনী। নায়ক হাডুডু খেলায় জিতে পুরষ্কার হিসেবে পাইলো একটা গরু। গাই গরু না ষাঁড় গরু সেইটা খেয়াল করিনাই। এইদিকে নায়কের খেলায় ফিদা হয়ে নায়িকা নায়কের প্রেমে পড়ে গেল। ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ভেসে এল ইন্ডিয়ান বাংলা সিনেমার গানের বাজনা।

পরদিন নায়িকা তার সইয়ের সাথে স্কুলে যাচ্ছে (কলেজ হইলেও একপ্রকার মানা যাইতো) বিপরিত দিক দিয়ে নায়কও কাবিলার সাথে করে আসছে। নায়ক কিছুই করতে পারলো না কিন্তু কাবিলা ঠিকই নায়িকার সইয়ের সাথে আই কন্টাক্ট করে ফেলল। এই কাবিলা যেই সিনেমাতেই থাকে সেই সিনেমারই অঘোষিত নায়ক হইয়া যায়।

এটিএম এর একটা বুইড়া চামচা ছিল। কাবিলা এইটারে দেখা মাত্রই কাছা মারলো। তারপর কুস্তিগীর দের মত ঠ্যাং তোলে আর থোড়ায় বাড়ি মারে। যখনই ঠ্যাং তোলে তখনই পিস্তলে গুলি লোড হওয়ার শব্দ হয়। কাবিলা কি ঠ্যাং তুইলাই গুলি লোড করতাছে। ওমা একটু পর থোড়ায় বাড়ি দেয়ার সাথে সাথে গোলাগুলির শব্দ শুরু হইয়া গেল! বাপরে কাবিলা দেহি কাছা মাইরাই আইজিআই খেলা শুরু কইরা দিছে।

পরেরদিন কাবিলার নায়িকা পেয়ারা পাড়তে পাড়তে গাছ থেইকা পইড়া গেল। পড়লোতো  পড়লো কাবিলার গায়ের উপরে। কাবিলার জন্য দু:খ হইতেছিল এই ব্যাটা উঠবে কেমতে। নায়ক নায়িকা আইসা না হেল্পাইলে কাবিলার ওইভাবেই সারাজীবন পার করা লাগতো। এই ফাকে নায়ক নায়িকার ফোন নাম্বার নিলো। নায়িকা রাত বারোটার আগে ফোনের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমাইয়া গেল। নায়ক ফোন দিলো রাত বারোটার পর (ধুর শালা কিপ্টা)। হায়হায় নায়িকার ফোনে কল আইলো অথচ ফোনের ডিসপ্লে কালাই হইয়া থাকলো। অত:পর এই ফোনের স্ক্রীন নষ্ট এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম। ফোনের গুজুরিং গুজুরিং এ নায়ক নায়িকার মাঝে চুক্তি হইলো তারা দিনের বেলায় দেখা করবে না। রাতের বেলায় দেখা করবে (এহেম এহেম , কাম সারছে :3 )।

নায়ক নায়িকা রাতের বেলায় দেখা করতে আসলো। তারপর সস্তা কিছু
প্রেমের ডায়লগ শুরু হল। আমি নিশ্চিত এখনকার মাইয়ারা এইসব সস্তা ডায়লগ শুনলে তার প্রেমিক রে ঝাটা দিয়া পিটাইবো। যাউক গা এরপর শুরু হইলো গান। গান শেষে দেখাগেলো কাবিলা তার নায়িকারে আর নারিকেল গাছ রে একসাথে জড়ায়া ধরছে। আরে ব্যাটা তুই একটারেই দুই হাত দিয়া বেড় পাবিনা তো দুইটারে একসাথে ধরোস কোন সাহসে?? হঠাত বিনের বাজনা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম আল্লাহ হলের ভিত্রে সাপ ঢুকলো না তো! কিন্তু একি! কাবিলা আর তার নায়িকা দেখি গান গাইতাছে
"মোকলেস কথা দে মোকলেস কথা দে আমারে ছাইড়া তুই যাইবি না আমি যে তোর দিওয়ানা ;
এই তো বোজ্জো"
সিরিয়াসলি এইটা ছিল গানের লিরিকস! এই গানের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবিলম্বে অস্কার, গ্র্যামি, ফিতাকৃমি, গোলকৃমি যাবতীয় এওয়ার্ড দেওয়া উচিত।
এই গান শেষ হইতে না হইতেই দেখা গেলো নায়িকার কোলে নায়ক শুইয়া আছে। আবার গান। কাবিলার গানের এক মিনিট পর আরেকটা গান। মানে লাস্ট তিনটা গানের মাঝে ১-২মিনিট বিরতি। ডিরেক্টরের কি ডাইরিয়া হইছে নি? একেতো সি গ্রেড মডেলিং টাইপের গান তাও দুই মিনিট পর পর্। এই গান শেষ হওয়ার পর দেখা গেলো দুপুর হয়ে গেছে অথচ নায়িকার কোল থেকে নায়কের মাথা তোলার নাম নাই। নায়িকার ভাই সেইটা দেখে ফেলল। নায়িকাকে বকাঝকা করার পরও নায়িকা ঠিকই নায়কের সাথে ফোনে কথা বলল। নায়িকার ভাই এইবার ফোন মারলো আছাড়। ফোন ডা আগের থেইকাই আন্ধা ছিল এইবার হইল মার্ডার।

প্রেমের টানে এইবার নায়িকা নায়কের কাছে ছুটে এলো। কিন্তু নায়িকার ভাই সেইখানেও তার গ্যাং আর ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প নিয়া হাজির্। ব্যাট আর স্ট্যাম্প দিয়া ইচ্ছামত নায়করে পিটাইয়া হাসপাতালে পাঠায়া দিলো। নায়কের মা রে দেখলাম অনেকগুলা হাড়িপাতিল হাতে নিয়া ঘরের দিকে যাইতে। একটা ভবিষ্যদ্বানী করে ফেললাম, নয়কের মা শুনবে তার ছেলে হাসপাতালে আর ওমনি হাড়িপাতিল গুলো ছুড়ে মারবে। আরে আরে হলোও যে তাই! এতক্ষন নায়কের বিরক্তিকর অভিনয়(!) অনেক কষ্টে সহ্য করেছি। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পরের অভিনয় দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেল। যে অভিনয়ের "অ" জানেনা তার অভিনয় দেখার চেয়ে যন্ত্রনার কিছু নেই।

যাই হোক নায়ক কি না কি বুঝে হাসপাতাল থেকে ছুটে গেল নায়িকার বাড়িতে। প্রথমে নায়ক নিজেই পিটাইলো নায়িকার ভাইয়ের চামচাগুলারে। চামচাগুলারে পিটায় আর সেইগুলা ড্যান্স দিতে দিতে শুইয়া পড়ে। হ্যা তারা কোমোর দুলিয়ে ড্যান্সই দিচ্ছিল। তারপর আবার নায়ক সেই ব্যাট স্ট্যাম্পের প্যাদানী খাইলো। একটা জিনিস বুঝলাম নায়কের ভাই খুব ক্রিকেট অনুরাগী। তাই সাথে সবসময়ই ব্যাট বল স্ট্যাম্প রাখেন। নায়িকার ভাই নায়িকা কে বলল, "যদি সুজন কে বাচাতে চাস তবে তাকে বলে দে তুই তাকে ঘৃনা করিস"। নায়ক বেচে যাবে এই শর্তে নায়িকা তাকে অপমান করতে রাজী হল।  একেতো মাইর খাইয়া নায়কের অবস্থা টাইট তার উপর নায়িকা আইসা নায়ক রে অপমান কইরা থুইয়া গেল। নায়িকার ভাষ্যমতে হাডুডু খেলায় তার ভাইকে হারানোর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে প্রেমের অভিনয় করে। এ যেন কাটা ঘায়ে ঝাল আর লবণ এর ছিটা।
নায়ক শোকে দু:খে "বেঈমান, এই পৃথিবীটা বেঈমান" ডায়লগে আকাশ বাতাস ভারী করে তুলল। সাথে বোতলের পর বোতল বাংলা মদ সাবাড় করতে থাকলো। নায়িকার এদিকে সেই শহুড়ে প্রথম নায়কের সাথে বিয়েও হয়ে গেল। মদ খেতে খেতে নায়ক মুখ দিয়ে রক্ত বের করে ফেলল। এক পর্যায়ে নায়ক মদ খেতে খেতেই মারা গেল। শেষমেশ দেবদাসের কাহিনী মাইরা দিলো।
 
মধ্যবিরতির পর থেকে যে ননস্টপ কান্নাকাটি শুরু হয়েছিল তা সিনেমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত থামলো না। এত কান্নাকাটি হলে আবেগ কিভাবে ধরে রাখি? :'( নায়ক কান্দে, নায়কের মা কান্দে, নায়কের বোন কান্দে, নায়িকা কান্দে, নায়িকার মা কান্দে, নায়িকার সই কান্দে, নায়িকার জামাই কান্দে সবাই কান্দে, কানতে কানতে হল ডারে মরাবাড়ি বানায়া হালাইছে। সিনেমা দেখার পর ভাবতেছিলাম আমি আসলেই এপিক লেভেলের ধৈর্য্যশীল। এই রকম সিনেমাও যে হজম করতে পারে তার ধৈর্য্য নিয়ে কেউ প্রশ্ন করারও সাহস পাবেনা।

সোমবার, ১৬ জুন, ২০১৪

রবীন্দ্রনাথ কি মেয়ে মানুষ ছিল???

ফোনে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছিলাম।
কাজিন জিজ্ঞাসা করলো, "এইটা কি গান শুনছো?"
মুডি এক্সপ্রেশন নিয়ে বললাম, "রবীন্দ্র সঙ্গীত"
কাজিন পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, "রবীন্দ্র সঙ্গীত মানে কি?"
বললাম, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান"
এইবার কাজিন বলল, "রবীন্দ্রনাথ কি মেয়ে মানুষ ছিল???"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "আজব! উনি মেয়ে মানুষ হবে কেন?? দেখিসনি কতবড় দাড়ি?"
এইবার কাজিন কন্ঠে কিছুটা রাগ মিশিয়ে বলল, "তো মেয়ে মানুষ গান গাচ্ছে কেন??"

[কাজিন আসলে ভেবেছিল গানের নারী কন্ঠশিল্পীটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

প্র্যাক্টিক্যাল রঙ্গ (রম্য)

এইচ এস সি প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার আগে কিছুদিন প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস হল। তারপর হলো প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা। এ প্র্যাক্টিক্যাল নিয়ে নানা রকম পরিস্থিতির সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে। নিচে তারই কিছু তুলে ধরি।
প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে দোস্ত আমারে জিগায়, "ওই, যকৃতের বৈজ্ঞানিক নাম কি রে?"
কি কইতাম তারে? :-/
তারপর দিন জীব বিজ্ঞান প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে  আমার এক দোস্ত আমার প্রেশার মাপছে। হালায় কয় আমার প্রেশার নাকি ২০০/০। আমি মানুষ না এলিয়েন সেই চিন্তা করছি।
এবার আসি প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার বিষয়ে।
প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় এক দোস্ত
আরেক দোস্ত রে জিগাইলো, "ওই কেঁচোর বৈজ্ঞানিক নাম কি রে?
তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি" দোস্ত আমার উত্তর দিলো, "Artocarpus heterophyllus"
সবাই তো হাসতে হাসতে শ্যাষ।
আমারেও কম জ্বালায় পড়তে হয়নাই।  তেলাপোকা কাটার পর
চারিদিক থেইকা কয়, "দোস্ত
একটা ম্যান্ডিবল দে তো।" "ওই
এক্সট্রা ম্যাক্সিলা আছে?" "দোস্ত আমার কেঁচো টা কেটে দেনা প্লিজ।"
এদিকে ভাইভার সময় স্যার আমার কান ধরে বলে, "এইটার নাম কি?"
-স্যার কান
:কান বুঝলাম। এইটাকে কি বলে
-স্যার কানের লতি

শনিবার, ৭ জুন, ২০১৪

তারকাটা | প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তবে হতাশ করেনি | মুভি রিভিউ সাথে একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা

গালের ডানপাশে জ্বর থাকায় অনেকক্ষন ধরে সিদ্ধান্ত নিলাম সিনেমা দেখতে যাওয়া ঠিক হবে কিনা :-P । অবশেষে জ্বর কে থোড়াই কেয়ার করে জীবনের ঝুকি নিয়ে সিনেমা শুরু হওয়ার ১৫মিনিট আগেই হলে হাজির হলাম। হলে তখন হিন্দী গানের সুর নকল করে ফালতু লিরিক্সের বাংলা গান বাজছে (আসলেই গানের ক্ষেত্রেও সেন্সর করা উচিত যাতে এইসব আউল ফাউল গান শুনতে না হয়) । একেতো বিরক্তিকর গান তার উপর গরম। তাই ভিতরে বসে না থেকে বাইরে চলে এলাম। সিনেমা শুরুর মিনিট খানিক আগে সিটে গিয়ে বসলাম।
জাতীয় সঙ্গীত বাজার সাথে সাথেই সিট ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ আসলো, "পোলাপাইন স্কুল কলেজে জাতীয় সঙ্গীতে দাড়ায় না আর হলের ভিতরে দাড়াইতে আইছে"
পেছনে তাকিয়ে আওয়াজকারীর উদ্দেশ্যে বললাম, "এই বয়সেই মাজায় সমস্যা? বাকী জীবন তো পড়েই আছে"
কি বুঝলো না বুঝলো জানিনা। পেছনের ছেলে গুলো উঠে দাড়ালো। ততক্ষনে আশেপাশের অনেকেই উঠে দাড়িয়েছে। যাই হোক যথারীতি সিনেমা শুরু হল। তারকাটা একটি সাদামাটা গল্প নিয়ে তৈরি। এই নকলের ভীড়ে সাদামাটা গল্প টাকে পজিটিভ ভাবেই নিচ্ছি। তবে পরিচালক এই সাদামাটা গল্প কেই খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সিনেমার শুরুতেই স্ক্রীনে একটি বড় হাতুড়ী নিয়ে আবির্ভূত হয় আরিফিন শুভ। যে এই সিনেমার মূল চরিত্র ইব্রাহীম। আরিফিন শুভ বেশ দারুন ভাবেই ইব্রাহীম চরিত্র টিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার গেটআপ এবং চরিত্রের সাথে একেবারে মানানসই এক্সপ্রেশনে দর্শক সিটি দিতে বাধ্য ছিল। জাদরেল সন্ত্রাসী ইব্রাহীম আসলামের ছোট ভাইকে খুন করে তার সাথে একটি ঝামেলা তৈরী করে। ইব্রাহীমের এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য তার বোন মৌসুমী তাকে ভাই বলে পরিচয় দেয়না। অথচ এই ইব্রাহীমই যখন একজন সাধারন যুবক ছিল, তখন সে ছিল মৌসুমীর নয়নের মনি।
এর পরে পর্দায় আবির্ভাব হয় বিদ্যা সিনহা মিমের। এবং যা হওয়ার কথা তাই হল, ইব্রাহীম চাঁদের মানে মিমের প্রেমে পড়ে যায়। মিম কে শিল্পী বানানো এবং পরে তারই সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করা, পুরোনো শত্রুতার জেরে আসলামের সাথে বারবার ঝামেলা, বোনের অবহেলা ইত্যাদী কাহিনী নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে সিনেমা (কাহিনী আর কমুনা :-P রাজ ভাই পিটাইতেও পারে :-P )।
বাংলা সিনেমার বর্তমান পরিস্থিতিতে এধরনের সিনেমা নিয়ে সমালোচনা করা উচিত নয়। কারন একের পর এক বস্তাপঁচা সিনেমার মাঝে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকেই হাজির হয়েছে তারকাটা। তবুও এই সিনেমার ভালো না লাগার দিক গুলো তুলে ধরলাম।
সিনেমায় কিছুক্ষন পরপর লম্বা গানের ব্যবহার কিছুটা খারাপ লেগেছে। মনে হল মিউজিক্যাল ফিল্ম দেখছি। তারকাটা এ্যাকশন ফিল্ম হলেও এতে এ্যাকশনের মাত্রা খুব কম ছিল এবং ফাইট দৃশ্য গুলো একেবারেই সাদামাটা। এই জন্য তারকাটা টীম কে মাইনাস।
মৌসুমীর সাথে একটি গানে শুভর ন্যাকামীটা চোখে বেধেছে। শুভ কে ললিপপ বেবি বানিয়ে দেয়ার কোনো মানে ছিলনা :-P । মূল ভিলেন হিসেবে ফারুক আহমেদ কে দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম। ভিলেন হিসেবে সে চরিত্রটিকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। পুরো চরিত্রটাতেও সে অট্টহাসি দিয়ে গেছে যেন সে দিনে তিন বেলা লাফিং গ্যাস খায়। পুরো সিনেমায় প্রান আপআর সিম্ফোনি মোবাইলের ব্যবহার ছিল মাত্রাতিরিক্ত। পোলাপাইন রে প্রান আপের বোতল দেয়া, প্রান আপ মিউজিক এওয়ার্ড, প্রান আপের সৌজন্যে কনসার্ট এইগুলা কে বেশি বেশি মনে হয়েছে। আবার বারেবারে সিম্ফোনি মোবাইল কে ফোকাস করা, সিম্ফোনির সৌজন্যে ইন্টার্ভাল এগুলোও ছিল বাড়াবাড়ি।
মিম কে এতবড় শিল্পী বানানোর পিছনে কার অবদান সে সম্পর্কে জানার কোনো আগ্রহ মিমের মাঝে দেখা যায় নি।
মিম কে ডা. এজাজ আম্মিজি বলে ডাকতো আর শুভ কে বলতো ছোট ভাই। ছোট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড কে আম্মিজি বলা উচিত নয় এইটা তার বোঝা উচিত ছিল। মৌসুমীর চরিত্রটি এই সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তবে মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে তিনি যেন চরিত্রের মাঝে ঢুকতে পারেননি। হঠাত করে তাকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখা গেল আবার তারপরই তাকে সুস্থাবস্থায় দেখা গেল। পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত প্রচারের নমুনা স্বরুপ এক দৃশ্যে দেখা গেল তিনি ভাটিকা তেলের বোতল জড়িয়ে ধরে কাদছেন(!)
সিনেমাটির গল্পটি মৌলিক হলেও প্রথমদিকে চোরাবালি সিনেমার ছায়া পাওয়া গেছে। আর মিমকে বারে গাইতে গাইতে সুপারস্টার বানিয়ে দেয়ার বিষয় টা আশিকি টু সিনেমার সাথে তুলনা করা যায়। আমার মনে হয় এই কাজ টা করার কোনো দরকারই ছিল না।
পুরো সিনেমায় আসলামের সাঙ্গপাঙ্গো হিসেবে ২-৩জনকেই ঘুরে ফিরে দেখা গেছে। এদিকে আরো কিছু সহশিল্পীকে নিলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগতো না। ইন্টার্ভালের আগের অংশটুকু বেশ ধীরগতিতেই চলছিল কিন্তু ইন্টার্ভালের পর সব হুটহাট করে হয়ে যেতে থাকে। শুভ ও মিম কে যখন একসাথে আটকে রাখা হয় তখন শুভর একটা উক্তি ছিল, "ওই কই যাস? খুলে দিয়ে যা" এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের দূর্বল ডায়লগ ভালো লাগেনি। শুভ আর মিমের রোমান্সের অংশগুলো একটু কম হয়ে গেছে। শেষদিকে এসে হুটহাট কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া সিনেমার সবচেয়ে বাজে দিক ছিল। প্রথমে মৌসুমির মেয়ে দিয়া কিডন্যাপ হল, তারপর মিম কে কিডন্যাপ করলো। এবার মিমকে বাচাতে গিয়ে শুভও আটকা পড়ে গেল। হিসাব অনুযায়ী শুভ কে আটকে না রেখে মেরে ফেলা উচিত ছিল। আরে ব্যাটা তোর ভাইরে যে মারছে তারে বারবার সুযোগ পাওয়ার পরও মারতাছোস না ক্যান? এরপর আবার মৌসুমীকেও কিডন্যাপ করা হল। মিম এর একটা বোন থাকলে দেখা যেত তাকেও কিডন্যাপ করা হয়েছে।
অনেক খারাপ দিক নিয়ে বলে ফেলেছি, এবার কিছু ভালো দিকও বলি। চারিদিকে যখন নকলের ভীড় তার ভিতর পরিচালক সাহস করে মৌলিক গল্প নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন এর জন্যই রাজ ভাই কে প্লাস দেয়া উচিত। সবার অভিনয় দারুন ছিল। আরিফিন শুভ বেশ দারুন ভাবে তার চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে সত্যিই কোনো নায়কের অভিনয় দেখছি পাশাপাশি তার বডি ফিটনেস, গেটআপ তো আছেই। পিস্তল মাথার এক পাশে ধরে ডায়লগ বলে যাওয়া ভালো লেগেছে। আবার মৌসুমী যখন শুভ কে বলল, "ভয় পাস না কেন?" তখন শুভর ভয় পাওয়ার অভিনয় টা দারুন ছিল।
মিম তো এই সিনেমায় তার আগের সব কাজ কে ছাপিয়ে গেছে। তাকে বেশ গ্ল্যামারাস লাগছিল। বাংলাদেশের নায়িকাদের সমস্যা হল তারা চরিত্রের ভিতর ঢুকতে পারেনা, অভিনয়টা কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়া বা বিরক্তিকর আহ্লাদী টাইপের হয়ে যায়। কিন্তু মিম এদিক দিয়ে বেশ সাবলীল ভাবে কাজ করেছে। মিম কে যেন আরো অনেক সিনেমায় পাওয়া যায় সেই আশায় থাকবো।
সিনেমায় শুভর সহকারী হিসেবে রাজু নামে একজন কে দেখা গেছে যে পুরো সিনেমায় তোতলামী(নাকে কথা) করে সিনেমাটাকে আরো উপভোগ্য করে তুলেছে। ছোটখাটো চরিত্র থেকে পারফেক্ট অভিনয় পাওয়াই যায়না আমাদের সিনেমায়, কিন্তু রাজু এদিক থেকে ব্যতিক্রম। আর মিমের সহকারী হিসেবে যে মেয়েটা ছিল সে যেন কথার রেলগাড়ি। এক নি:শ্বাসে সাধু চলিত আঞ্চলিক মিশ্রিত কথা বলে সে সবাইকে আনন্দ দিয়েছে।
শিশুশিল্পী হিসেবে দিয়ার অভিনয় কে আমি সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবো। এতটুকু বাচ্চা যেন বাস্তবেই সব কিছু করে যাচ্ছিল। তার অভিনয়টা মোটেও কৃত্রিম মনে হয়নি।
এই সিনেমার চিত্রগ্রহণ অন্য যেকোনো সিনেমা থেকে অনেক অনেক গুন ভালো। খায়ের খন্দকার দেখিয়ে দিয়েছেন তার ক্যামেরার জাদু। সিনেমার কালার গ্রেডিং খুবই সুন্দর ছিল। আসল কথা এই সিনেমা তে আসল সিনেমেটিক ফ্লেভার পাওয়া গেছে। অন্যান্য সিনেমাগুলোতে এতটা সিনেমেটিক ফ্লেভার পাওয়া যায়না। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আরিফিন রুমি কে এ প্লাস দেবো। গান গুলো দারুন ছিল। "রূপে আমার আগুন জ্বলে" , "পৃথিবীর ভেতর একটাই জীবন "
, "তুই যে আমার নয়ন মনি" ,
"কি যে শুন্য শুন্য লাগে তুমি হিনা"
, "হৃদয়ের যত দু:খ " , "আমি রদ্দুর হব " প্রতিটা গানই শ্রুতিমধুর।
সিনেমার সাদামাটা গল্পকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন, দারুন অভিনয় এসব দিক বিবেচনা করে সবাইকে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানাবো। (আপনি বেশি খুতখুতে হলে আবার সমস্যা :-P )
এবার সিনেমা দেখতে গিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলি ।
সিনেমা দেখতে বেশ কয়েকটি যুগল এসেছিল। বিবাহিত দম্পতিও এসেছে দেখলাম। কিন্তু আমার ঠিক পেছনের সারিতে বসে থাকা ৫টি ছেলে খুবই বাজে আচরন করছিল। তারা যুগল দের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অশ্লীল কথা বলছিল যেগুলো পাবলিক প্লেসে বলা যায় না। আশেপাশে অনেকেই হেসে তাদের উৎসাহ দিচ্ছিল এবং তারা দ্বিগুণ উৎসাহে ইভ টিজিং করে যাচ্ছিল। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একে একে তিন টা যুগল উঠে চলে গেল। অনেকক্ষন ধরে ভাবছিলাম কিছু বলবো। মুখ ফস্কে বলেই ফেললাম,
"ভাই তারা তো ভালোভাবেই সিনেমা দেখছিল। আপনারা কেন শুধু শুধু অশ্লীল কথাবার্তা বলে তাদের চলে যেতে বাধ্য করলেন? আপনাদের জন্য তো বিবাহিত দম্পতিরাও উঠে চলে গেল। বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকে"
ছেলেগুলো আমার কথা শুনে পুরোপুরি অপ্রস্তুত হয়ে গেল মনে হল। একটা ছেলে বলল, "ভাই এরা কি আপনার আত্মীয় হয় যে এভাবে কথা বলছেন? সিনেমা দেখতে আসলে এগুলো সহ্য করার প্রিপারেশন নিয়ে আসতে হয় "
বললাম, "আত্মীয় হয় না, তবে আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে কেউই ভালোভাবে সিনেমা দেখতে পারবে না।"
বাকী সময়টুকু পেছন থেকে আর কোনো আওয়াজ আসতে শুনিনি। মনে মনে ভাবলাম হল থেকে বেরিয়ে আমার সাথে একটা ঝামেলা হতে পারে। পরে আবার ভাবলাম ঝামেলা করার সাহস পাবে না হয়ত। এদের কারনেই হলে নারী দর্শকেরা সিনেমা দেখতে পারেনা। আর আশেপাশের বুঝদার মানুষেরা কাপুরুষের মত চুপ করে থাকে। হল থেকে বেরুনোর সময় আমার চেয়ে জুনিয়র কাউকে চোখে পড়লো না। একজন আমাকে দেখে বলল, "ভাই একদম উচিত কথা বলেছেন।"
যদি গার্লফ্রেন্ড কে সাথে নিয়ে সিনেমা দেখতে যান অথবা কোনো মেয়ে তাদের বান্ধবীদের সাথে করে সিনেমা দেখতে যান তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা, হলে কেউ মেয়েদের উত্যক্ত করলে নিজে তার প্রতিবাদ করুন অথবা হলের কর্মচারীদের জানান। জাতীয় সঙ্গীতের সময় দাড়িয়ে সম্মান জানান। অন্যান্য সিনেমার পাশাপাশি একটু সময় করে বাংলা সিনেমা দেখুন। ভালো হোক খারাপ হোক এটা আমাদেরই সিনেমা। ভারতীয় বাংলা সিনেমা কিন্তু আমাদের সিনেমা না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশের সিনেমা।

শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

সিনেমা দেখতে গিয়ে একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা

সিনেমা দেখতে গিয়ে একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা

সিনেমা শুরুর সময় পর্দায় জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা গেলো এবং জাতীয় সঙ্গীত বাজলো। আমি সিট ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। আমার দাড়ানো দেখে পেছন থেকে একজন বলে উঠলো, "স্কুল কলেজে দাড়ায় না আর হলে এসে দাড়াচ্ছে।"
একটু তাচ্ছিল্য করেই বললাম, "কি ভাই এখনই মাজায় সমস্যা? বাকী জীবন তো পইড়াই রইছে"
কি বুঝলো জানি না, তারা সিট ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ততক্ষনে আশেপাশে অনেকেই উঠে দাড়িয়েছে। বিষয়টা ভালো লাগলো একজনের দেখাদেখি বাকিরাও উঠে দাড়াচ্ছে দেখে।

সিনেমা দেখতে বেশ কয়েকটি যুগল এসেছিল। বিবাহিত দম্পতিও এসেছে দেখলাম। কিন্তু আমার ঠিক পেছনের সারিতে বসে থাকা ৫টি ছেলে খুবই বাজে আচরন করছিল। তারা যুগল দের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অশ্লীল কথা বলছিল যেগুলো পাবলিক প্লেসে বলা যায় না। আশেপাশে অনেকেই হেসে তাদের উৎসাহ দিচ্ছিল এবং তারা দ্বিগুণ উৎসাহে ইভ টিজিং করে যাচ্ছিল। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একে একে তিন টা যুগল উঠে চলে গেল। অনেকক্ষন ধরে ভাবছিলাম কিছু বলবো। মুখ ফস্কে বলেই ফেললাম,
"ভাই তারা তো ভালোভাবেই সিনেমা দেখছিল। আপনারা কেন শুধু শুধু অশ্লীল কথাবার্তা বলে তাদের চলে যেতে বাধ্য করলেন? আপনাদের জন্য তো বিবাহিত দম্পতিরাও উঠে চলে গেল। বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকে"

ছেলেগুলো আমার কথা শুনে পুরোপুরি অপ্রস্তুত হয়ে গেল মনে হল। একটা ছেলে বলল, "ভাই এরা কি আপনার আত্মীয় হয় যে এভাবে কথা বলছেন? সিনেমা দেখতে আসলে এগুলো সহ্য করার প্রিপারেশন নিয়ে আসতে হয় "
বললাম, "আত্মীয় হয় না, তবে আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে কেউই ভালোভাবে সিনেমা দেখতে পারবে না।"

বাকী সময়টুকু পেছন থেকে আর কোনো আওয়াজ আসতে শুনিনি। মনে মনে ভাবলাম হল থেকে বেরিয়ে আমার সাথে একটা ঝামেলা হতে পারে। পরে আবার ভাবলাম ঝামেলা করার সাহস পাবে না হয়ত। এদের কারনেই হলে নারী দর্শকেরা সিনেমা দেখতে পারেনা। আর আশেপাশের বুঝদার মানুষেরা কাপুরুষের মত চুপ করে থাকে। হল থেকে বেরুনোর সময় আমার চেয়ে জুনিয়র কাউকে চোখে পড়লো না। একজন আমাকে দেখে বলল, "ভাই একদম উচিত কথা বলেছেন।"

আসুন বাংলা সিনেমা দেখি

আমার যতদূর মনে পড়ে ২০১১ সালের দিকে ঢালিউড নিয়ে পেজ ও গ্রুপ গুলো সক্রিয় হতে থাকে। তখন আমরা বেশ কয়েকজন ঢালিউডের গ্রুপ গুলো তে আড্ডা মারতাম, সিনেমা নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতাম, তর্ক বিতর্ক করতাম, কখনো কখনো তুমুল ঝগড়া হত। ওইসব গ্রুপে সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই ছিল, তাই ঢালিউড কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ভাবনা গুলো উপস্থাপন করতাম। আমি নিজেও অনেক পেজ ও গ্রুপের এডমিন ছিলাম। ২০১২ সালের দিকে আমার মনে হয় গ্রুপ ও পেজ গুলো সর্বাধিক সক্রিয় ছিল।  বাংলা সিনেমা নিয়ে লাফালাফির কারনে অনেকেই আমাকে "ক্ষ্যাত" উপাধি দিতো। এতে আমার কোনো আফসোস ছিল না। কারন ভালো হোক খারাপ হোক এটা আমাদের সম্পদ। তাই বাংলা সিনেমার পাশে থাকা নিজের দায়িত্ব বলে মনে করতাম। আর আমার মত ক্ষ্যাত গুলোই গাটের পয়সা খরচ করে হলে গিয়ে সিনেমা দেখি। বরং গর্ব হত দেশের রুগ্ন একটা শিল্পের পিছনে আমরা অনলাইনে প্রচার প্রচারনা চালাতাম বলে, ক্ষ্যাত ছিলাম বলেই ভাবতাম "আমি সিনেমা না দেখলে ঢালিউড যাবে যাদুঘরে"

জাজ মাল্টিমিডিয়া যখন সিনেমা হল ডিজিটাল করা শুরু করলো তখন কুষ্টিয়ার বনানি হল ডিজিটাল করার জন্য শীষ মানোয়ার এবং জাজের পেজে মেসেজ দিয়ে পাগল করে দিতাম।
মাঝে অবশ্য অনেকদিন সিনেমা নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ ছিল। পরে অবশ্য আবার সিনেমা নিয়ে লেখালেখি শুরু করি। কিন্তু ঢালিউডের সেসব গ্রুপ ও পেজ আগের মত নেই। মরে গেছে সেগুলো। আসল কথা এবং নির্মম সত্য হল আমরা আমাদের সিনেমাকে নিয়ে ভাবতে ভালোবাসি না। আমরা ভাবি এই সেক্টর টা তে আমরা কোনোদিনই কিছু করতে পারবো না। এখনো আমাকে শুনতে হয়, "তুমি বাংলা সিনেমা দেখ!!!??" সবার ভিতরেই বাংলা সিনেমা নিয়ে একধরনের অবজ্ঞা কাজ করে। হ্যা আমি বাংলা সিনেমা দেখি। গাটের পয়সা খরচ করে দেখি। আমার তো ভালো খারাপ সব ধরনের সিনেমা দেখার অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু অন্যদের কি উচিত নয় বেছে বেছে ভালো সিনেমা গুলো দেখা? আপনি আমি মিলে একটু চেষ্টা করে ভালো সিনেমাগুলো কে ব্যবসা সফল বানিয়ে দিলে আরো কিছু ভালো সিনেমা তৈরি হবে। খারাপ সিনেমা গুলো দেখার দরকার নেই, শুধু তুলনামূলক ভাবে ভালো সিনেমা গুলো দেখুন। একটু নাহয় কমই বিনোদন পেলেন।

আপনি আমি মিলে যদি বাংলা সিনেমার বাজার ১০ কোটির উপরে নিয়ে যাই তবে সিনেমার বাজেট বাড়বে। অনেক তরুন নির্মাতারা বড় বাজেটে ভালো সিনেমা তৈরিতে আগ্রহী হবে।

[আগামী কাল মুক্তি পাচ্ছে তরুন নির্মাতা মুহাম্মদ মুস্তাফা কামাল রাজের দ্বিতীয় সিনেমা "তারকাটা"। আমার কাছে মনে হল সিনেমাটা ভালোই হবে। তবে আমি সবাইকে সিনেমা টি দেখার আমন্ত্রন জানাচ্ছি। যদি কারো মনে হয় রিভিউ পাওয়ার পর দেখার সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাও করতে পারেন। আমি স্বপ্ন দেখি বাংলা সিনেমা মাথা তুলে দাড়াবেই ]

বুধবার, ৪ জুন, ২০১৪

আজব প্রশ্নের গজব উত্তর | পর্ব- ১২ (রম্য)

আজব প্রশ্নের গজব উত্তর | পর্ব- ১২ (রম্য)

প্রশ্ন: গার্লফ্রেন্ড আছে?

উত্তর: আছে মেলাগুলা (দোহাই লাগে কেউ যেন না জানে)

প্রশ্ন: জাস্টিন বিবারের কী আছে যা আপনার নাই?

উত্তর: গুগলে 569,000,000টি সার্চ রেজাল্ট।

প্রশ্ন: ডাবল চেইনচুরি করেছেন আপনার অনুভূতি কি?

উত্তর: আরে মুন্নি আপু! কেমন আছেন? চেইনচুরির কথা বাদ দেন।
পোলাপান আপনারে এতো পচানি দেওয়ার পরেও দেখি আপনার স্বভাব বদলায়নাই। আপ্নি কিন্তু ইউনিক আছেন

প্রশ্ন: আপনাকে যদি একঘন্টা রোদে দাড় করিয়ে রাখি তবে কি করবেন?

উত্তর: সৌরবিদ্যুৎ বানানোর যে বোর্ড আছে তা মাথার উপর ধরে রাখবো, দেশ ও দশের উপকারও হবে, গায়ে রোদ ও লাগবে না B)

প্রশ্ন:  “ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় আমার বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া হাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়” উক্ত
কবিতা দ্বারা কবি কি বুঝাতে চাহিয়াছেন?

উত্তর: কবির মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হয়েছে। তাকে আইসিইউতে পাঠাতে হবে [রাজি ভাই]

প্রশ্ন: ফেসবুক যদি কাগজের বই হত আর তাতে কলম ব্যবহার করে লিখতে হত তাহলে কতজন ফেসবুক ব্যবহার করতো?

উত্তর: সংখ্যাটা জানিনা। তবে বাংলাদেশ, ভারত আর ইন্দোনেশিয়ার এড মি আর লাইক ব্যাক পাব্লিক ঠিকই ব্যবহার করত।
দেখা যাবে ভারতের পাব্লিক খাতা কলম নিয়ে প্লেনে করে বাংলাদেশে এসে এড মি এড মি করছে।

প্রশ্ন: পরিশ্রম কাকে বলে ??

উত্তর: কোনো লক্ষ্য পূরনের উদ্দেশ্যে নিরলস কাজ করে যাওয়া কে পরিশ্রম বলে। সবচেয়ে উতকৃষ্ট উদাহরণ ফেসবুকের এড মি পাবলিক

প্রশ্ন: একসাথে তিন চারটা মেয়েকে হ্যান্ডেল করতে হলে কি করব?

উত্তর: তেল বেশি করে নিবেন আর তিন চারটা রেডিমেট হাত লাগিয়ে নিবেন

প্রশ্ন: ফেসবুকে কোন মেয়ে অফার
দিলে কি করবেন?

উত্তর: পণ্য ভাল হইলে টিভি দেখে অফারের সত্যতা যাচাই করব

প্রশ্ন: হাম তেরে বিন আব রেহে নাহি সাক্তে …… এই কবিতা দ্বারা কবি actually কি বুঝাতে চেয়েছেন ???

উত্তর: কবির হাম হয়েছিল, কিন্তু ভুল করে ডাক্তারের বদলে সাপুড়ে খবর দিয়ে আনানোতে বিন বাজিয়ে কোন লাভ হইনি , বরং দুটো বিষাক্ত সাপ চলে এসেছে।

প্রশ্ন: মা বড় নাকি বউ বড় ???

উত্তর: আমি আমার চেয়ে কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করব। তারা তো আম্মুর কাছে একেবারেই বাচ্চা

মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০১৪

ফাঁদ-দ্যা ট্র্যাপ | এই সিনেমা দেখার চেয়ে চেয়ে বিয়ের ভিডিও দেখাও ভালো (মুভি রিভিউ)

ইদানিং শাকিবের সিনেমার নামকরণও অনন্ত জলিলের মত হচ্ছে। কৌতুহলী হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম দেখেই ফেলবো ফাঁদ-দ্যা ট্র্যাপ। ভেবেছিলাম ঘুঘুর ফাঁদ হয়ত দেখলেও দেখতে পারি। শাকিবের সিনেমা বলে কোনো ফ্রেন্ড কে সিনেমা দেখার আমন্ত্রন জানানোর রিস্ক নিলাম না। শেষ মেশ তাদের হাতে মার খেয়ে আমিই ফাঁদে পড়ে যেতে পারি। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত আমিও ফাঁকা হলে কেবলই গা এলিয়ে দিয়েছি। ওমনি স্ক্রীনে দ্রুম করে শব্দ হল। কি হল কি হল! বোমা টোমা পড়লো নাকি? স্ক্রীনে পরিচালকের নাম দেখে বুঝলাম বোমা টোমা কিছুই না ওইটা পরিচালকের নাম ছিল।
কাজী হায়াত দেখি দুইপাশে দুইটা নাদান লোক আর সামনে কয়টা সাংবাদিক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে। সাংবাদিক দের ভিতর ভালো করে খুজলাম কোথাও মুন্নি সাহা আছে নাকি। যাক কাজী হায়াত বাচছে মুন্নি সাহা নাই দেইখা। নাইলে বেচারার কপালে দু:খ আছিল। কাজী হায়াত কি না কি থিওরী আবিষ্কার করছে সেইটা দিয়ে নাকি অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। যাক বাবা এইবার বুঝি দেশের বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে। কিন্তু কাজী হায়াৎ খালি কয় থিওরী দিয়া বিদ্যুৎ বানাইবো। আরে ব্যাটা থিওরী দিয়া বানাবি বুঝলাম, ভনিতা না কইরা কইলেই তো হয় কি কাচামাল ব্যবহার করবি। এখন নাহয় তেল, পানি, গোবর, বাতাস, সূর্যের আলো ইত্যাদী ব্যবহার করে বিদ্যুত বানায়। তুই কি দিয়া বানাবি সেইটা ক্লিয়ার কর্। নাকি তোর থিওরী লিখলেই বিদ্যুত তৈরি হইয়া যাইবো? হইতেও পারে বলা যায় না।
এদিকে দেখি গীটার নিয়া মুখ না নাড়ায়া গান গাইতে গাইতে নায়ক হাজির্। নায়ক কে ঘিরে ধরে চারটা মেয়ে হাত উপর থেকে নিচে নামাচ্ছে আর মাজা দুলাচ্ছে। নায়ক রে জাদুটোনা করতাছে না তো! পরে বুঝলাম এইটা নাচ ছিল। যাউক গা নাচ নিয়া আমার মাথা ঘামায়া কাম নাই। এরপর নায়ক তার বস রে যা কইলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। শাকিব তার বসের কাছে বিলিয়ন ডলার চায় (যেন বিলিয়ন ডলার ওর পকেট মানি)। তার বসও শাকিবের প্রতি এমনই খুশি যে তার মানিব্যাগ বের করে এখনই বিলিয়ন ডলার দিয়ে দেবে।
সিনেমা আবার চলে আসলো বাংলাদেশে। অমিত হাসান কাজী হায়াতের গার্ড রে এমন মাইর দিল যে গার্ড মাটিতে পড়ার আগেই মাটি রক্তে লাল হইয়া ছিল। বুঝলাম না মাটি ফাইটা রক্ত বাইর হইল ক্যাম্নে? যাউক গা আমার বুইঝা কাম নাই, ভিতরে দেখি কাজী হায়াত কয়েকটা কম্পিউটারে কি জানি টিপাটিপি করলো তারপর একটা হার্ড ডিস্ক হাতে নিয়া ইউরেকা ইউরেকা কইরা লাফাইলো। আর কইতেছিল তার সারাজীবনের স্বপ্ন তার ডিস্কের ভিতরে। ধুর ব্যাটা, এইটা তো তুই জানোসই, অমিত হাসান রে জোরে জোরে শুনানোর কি আছে? এখন তো তোর কাছ থেইকা ডিস্ক কাইড়া নিবো। নিলোও তাই। এই ডিস্ক বেইচা নাকি অমিত হাসান দশ বিলিয়ন টাকা পাইবো। বুঝলাম এই সিনেমায় খালি বিলিয়নের কারবার। দশ বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টের সিকিউরিটির জন্য দুই তিনজন লাঠিয়াল গার্ডই যথেষ্ট।
এইবার অমিত হাসান এয়ারপোর্টে হাজির ডিস্ক নিয়া মালয়েশিয়া যাইবো। আরে বলদের বাচ্চা এই ইন্টারনেটের যুগে ডাটা ট্রান্সফারের জন্য শশরীরে মালয়েশিয়া যাওয়া লাগে? ডিস্ক তো তোর হাতেই। আর তখনই সে ডিস্ক টা সুন্দর ভাবে আচলের ভ্যানিটি ব্যাগে দিয়ে দিলো। পেছনের আবুল পোলা সব দেখলো অথচ কিছুই কইলো না! ওই বলদা পোলারে থাব্রানো উচিত।
পুলিশ অমিত হাসান রে ধইরা ফালাইলো, অথচ তার কাছে কোনো ডিস্ক পাইলো না। পাইবো ক্যাম্নে? ডিস্ক তো আচলের আচলে থুরি ভ্যানিটি ব্যাগে। যেই এয়ারপোর্টে জুতার ভেতর, আন্ডারওয়্যারের ভেতর কইরাও শান্তিমত সোনার বার পাচার করা যায় না, সেই এয়ারপোর্টে ভ্যানিটি ব্যাগে ডিস্ক ক্যাম্নে পাচার হবে বুঝতে পারলাম না। এদিকে আবার এক চ্যালা পুলিশ তার উপরের লেভেলের পুলিশ রে কয় অমিত হাসানরে ক্রসে দেয়া উচিত। ধুর ব্যাটা তোরাই যদি মুখের কথায় ক্রস দিবি তাইলে RAB কি আঙ্গুল চুষবো? এইবার পুলিশের এক অফিসার কইলো, "বিজ্ঞানী মুনতাসির মামুন (কাজী হায়াত) কি জানি এক "পারমানবিক এটম" তৈরি করেছে সেটা দিয়ে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।"
পাশে কুড়াল থাকলে নিজেই নিজের মাথা কুপাইতাম, কুপাইয়া কোনো পারমানবিক এটম পাই কি না দেখতাম। কেমিস্ট্রি তে অবিলম্বে "পারমানবিক এটম" যুক্ত করার জন্য ইভেন্ট খোলা উচিত।
পারমানবিক এটম হোক আর অমানবিক এটম হোক সেইটা নিয়া আর মাথা ঘামাইলাম না। নায়িকা সহীহ সালামত্র ডিস্ক ব্যাগে করে মালয়েশিয়ায় গিয়ে হাজির। একা একাই এয়ারপোর্টের বাইরে বাইর হইয়া আইলো। ইভা নামের একটা মেয়েরে ফোন দিলো। কিন্তু ক্যামেরার কীর্তিকলাপে বুইঝা গেলাম এইটা সাইড নায়িকা :-P । কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, সাইড নায়িকার গ্যালাক্সী কোরে কল আসলেও আলো জ্বলে না ক্যান? মনে হয় ফোনের স্ক্রীন নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এদিকে আবার তিন টা চ্যালা আচলের ভ্যানিটি ব্যাগ নেয়ার জন্য দাড়ায়া ছিল। তারা কিছুক্ষন "হ এই মাইয়া, এই মাইয়া না?" এইরকম আঙ্গুলবাজী করে আচলের পিছু তাড়া করলো। আচলরে মনে হয় কেউ আগেই বলে রাখছিল তাকে তাড়া করা হবে, তাই সে আগেই দৌড় দিলো। এইবার ভিডিও নায়কের পায়ের ফাঁকে, সেই ফাঁক দিয়া দেখা গেলো আচল দৌড়িয়ে আসছে। কি দিয়া কি হইলো সব চ্যালা  চিৎপটাং । নায়িকার মাথার ডান পাশে হাত নিয়ে একটা স্ক্রু টাইট দিয়ে নায়ক বুঝিয়ে দিলো সেই মেরেছে গুন্ডাদের্। নায়িকা হয়ে গেলো ফিদা। এদিকে নায়িকার বোন ইভা গাড়ি নিয়ে মারপিটের স্পটে এসে হাজির যেন প্লেন থেকে নেমে নায়িকার এখানেই থাকার কথা ছিল :-P
নায়িকা যেহেতু ফিদা তাই এখন একটা গান হওয়া উচিত। শুরু হল শিখবো প্রেমের এবিসিডি। শাকিবের সিনেমা যারা দেখেন তাদের কাছে এই ড্যান্স অপরিচিত নয়। কারন প্রায় সব সিনেমাতেই আগ পিছ করে এই ড্যান্স তিনি দেন। সাথে তো তার ঠোটের কারুকাজ, কীর্তিকলাপ থাকেই :-P
নায়িকা ইভারে কইলো "হিন্দীতে একটা কথা আছে না, পেহলে দর্শনধাতী ফির গুনবিচারি"। আব্বে হিন্দী শেখার স্কুলে যা।  এরপর নায়িকার বোন ইভা নায়িকার জামা পরে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় ঘোড়ার মত লাফাতে লাফাতে তার বস এর কাছে যাচ্ছিল। আরে ছেমড়ি গাড়ি না নিয়া কই যাস? ঘোড়া হইয়াই কি বস রে ঘোরাবি? হঠাত সেই তিন চ্যালা হাজির্। তারা মোবাইলে ছবি দেখেই ইভার হাত থেকে ব্যাগ হাতিয়ে নেয়।  আরে ব্যাটা মাইয়াগো ছবি তে আগে কেউ জামা দেখে যেইখানে মাইয়ার মুখ পর্যন্ত আছে? বুঝলাম এই তিন ডারও ঘোড়ার বুদ্ধি। ইভা কে বাচানোর জন্য কোথা থেকে তার বস এসে হাজির্। এই ব্যাটা নিজের বাসায় না থেকে ইভার বাসার সামনে কি করে!??
এইবার শুরু হইলো গান। "বনমালি মনটা খালি হাতে হাতে বাজাও তালি" সে কি গানের কথা আর ড্যান্স তো পুরাই ঘোড়া লাফাইন্না। এইটা না দেখলে জীবনই বৃথা। গান শেষ হইতেই আচল কে আক্রমন করলো অমিত হাসান। কিন্তু একি! আচলই অমিত হাসানের হাত ধরে রেখে বলছে "ছাড়ো ছাড়ো"। নাকি অমিত হাসান হাতে ফেভিকল লাগায়া নিছিল?
ডিরেক্টর সাব দেখি সিনেমার প্রথম গান টা আবার দিয়া দিলো। গানের তো কম পড়ার কথা না।  এতক্ষন পর নায়িকা দেখি ডিস্ক টা ল্যাপটপে চালাইলো। ওরে মোর আল্লাহ! এইটা দেখি ভিডিও ফাইল! একটা ভিডিওর জন্য দশ বিলিয়ন ডলার! আর এইটার জন্যই এতকিছু! ইন্টারনেটে এক দেশ থেকে আরেক দেশে হাতিঘোড়া পাঠানো যায় আর এরা সামান্য ভিডিও ফাইল পাঠানোর জন্য এত কাহিনী করলো!?
নায়ক সাব যেইখানেই হাটতে থাকে সেইখানেই নায়িকা দেখি হাজির, আর দুজনের প্রতিবার দেখা হওয়ার পরই দুজন অবাক হয়। নায়িকা এবার নায়ককে বলিল, "তোমার মনের মনিটরে ভালোবাসার ফাইল আছে কিনা দেখতে চাই" আরে গাধী ফাইল কি মনিটরে থাকে? ফাইল থাকে হার্ড ডিস্কে এইটাও জানোস না। এইবার শাকিব বলিল, "নেই, তোমার হৃদয়ের নেট থেকে যদি ডাউনলোড করে দাও তবে পাওয়া যাবে" এইডা দেখি পুরাই ডিজিটাল ভালোবাসা!  এইবার আবার গান। গানের কথা "চাই আমি তোমাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট" গান গুলোর গীতিকার আর সুরকার কে কাছে পেলে লম্বা সালাম দিতাম। সাথে কি সুন্দর নাচ। এরা এত এপিক ক্যা!?
সিনেমা প্রায় শেষ হয়ে আসলো তাও আমি কোনো ফাঁদ পাইলাম না কাহিনীতে। এদিকে অমিত হাসান এর সাথে সবসময় এই তিন চ্যালারেই দেখা গেলো। আরে চ্যালা চামুন্ডা কম পড়লে ধার নিতে পারতি। এক চ্যালারে বিভিন্ন রুপে হাজির করার মানে কি? অমিত হাসান এইবার শাকিবের ভাই আর অমিত হাসানের গার্লফ্রেন্ড কে মেরে ফেলল। অথচ শাকিব কে অজ্ঞান করেই রেখে দিলো। এইটা কেমন ইনসাফ! মারলে সবটিরে মার, আসল টারে বাচায়া রাখলি ক্যান? দশ বিলিয়ন ডলারের ভিডিও ফাইল বিক্রির জন্য এক বিদেশিরে ফোন দিয়া কইলো, "আই উইল কামিং"। অমিত হাসান ডিস্ক নিয়া বারে গেলো। সেইখানে বিদেশীরা বাংলা গানে নাচতেছিল। আসল নর্তকী দুই একবার মুখ মেলাচ্ছিল তবে বেশিরভাগ সময়ই চুপ ছিল। একবার বসলেই আরেকবার উঠলেই যেন নাচ হয়ে যায়।
সিনেমা এবার শেষ করা লাগবে। শাকিব অমিত হাসান কে মেরে তার কাছ থেকে ডিস্ক নিয়ে দেশে চলে এল। ডিস্ক পেয়ে কাজী হায়াত সুস্থ হয়ে উঠলো এবং সিনেমা টি শেষ হল।
সিনেমায় কোন ফাঁদ না পেয়ে এক দর্শকের মন্তব্য, "এই সিনেমা দেখার চেয়ে বিয়ের ভিডিও দেখা ভালো"

 
Tricks and Tips