শুরুতেই আমাদের হিরো কে গ্যাদা কালে পাচার কারীরা তার মা ও মামার সামনে তুলে নিয়ে যায়। এই প্রথম দেখলাম কোনো মায়ের সামনে তার সন্তান কে তুলে নিয়ে যাচ্ছে অথচ মা কোনো বাধা দিচ্ছে না, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সংলাপ বলছে। বিনা বাধায় পাচার কারীর হাত ধরে নায়ক চলে গেলেন ইন্ডিয়ায়। নায়কের ইন্ডিয়ায় নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখানো হল খুব চমৎকার ভাবে। আশায় বুক বাধবেন না, ওটা প্রিন্স সিনেমার কাটপিস ছিল। কাউকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যে যে অন্য সিনেমার কাটপিস ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে তা উত্তম ভাবেই দেখালেন আমাদের উত্তম আকাশ।
পিচ্চি শাকিব মুম্বাই গিয়ে পাচার কারীদের হাত থেকে পালিয়ে যায়। তারপর খাবার চুরি করে দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পড়ে যায়। তখন এক পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞেস করে – “তোমার বাসা কাহা হে?” এই হিন্দী তে ভুল আছে কিনা জানিনা। তবে অন্যান্য হিন্দীর মত শোনায়নি । কখন যে রাত হচ্ছিল আর কখন যে দিন হচ্ছিল তা বোঝা বড় মুশকিল ছিল। এ পরযায়ে শাকিব একটু বড় হয়। তাকে দেখা গেল রাতের বেলায় এক রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতে। অপরদিকে দুইটা মেয়েকে লেকের ধার দিয়ে গল্প করতে করতে হাটতে দেখা গেল(দিনের বেলায়)। মেয়ে দুটির কথোপকথন ছিল এমন-
-কাল জো পিকচার চালা ও তু দেখা হে?
-হুম দেখা হে
-বহুত আচ্ছা থা । বাংলাদেশ কা পিকচার। ঢাকা টু বোম্বে
হিন্দী ভাষায় মেয়েরা যে “থা” বলে তা জানা ছিল না। আমারও ভুল হতে পারে কারন ডিরেক্টর ঢাকা টু বোম্বে সিনেমা মুম্বাই তে চালিয়ে হিট করে ফেলেছেন। উল্লেখ্য এই সিনেমার শুরুতে বেশিরভাগ দৃশ্যে কাটপিস ব্যবহার করা হয়েছে। মেয়ে দুটির উপর বখাটেরা হামলা করে আর পিচ্চি শাকিব রেস্টুরেন্ট থেকে এসে তাদের বাচায়।
এবার শুরু হল প্রিন্স সহ বেশ কয়েকটি সিনেমার কাটপিস শো। শাকিবের পেছনের দৃশ্য নড়ে বেড়াচ্ছে অথচ শাকিব সেই তুলনায় নড়ছে না। পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করে দৃশ্য গুলো ধারন করা হয়েছে সেটি আপনার চোখ এড়াবে না। ঠিক এই মুহুরতে এক অতি আশ্চরয ঘটনা ঘটে গেল। শাকিব এক টা সিগারেট খেয়ে ছুড়ে মারলেন আর ইয়া বড় একটা গাড়ী বিস্ফোরিত হয়ে দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। অভিনব দৃশ্য সিগারেট থেকে গাড়ী দ্বিখন্ডিত। তবে এটাও কাটপিস।
এবার দেখা গেল সিনেমার শুটিং চলছে। হিরো ভিলেন দের ধরতে গিয়েই পড়ে যাচ্ছে(মনে হচ্ছিল ইচ্ছাকৃত ভাবেই পড়ছে)। “তু এক হিজরা হে”। ডিরেক্টর গালি টা কাকে দিলেন বুঝতে একটু সময় নিলাম। শাকিব দিলো হো হো করে হেসে। ডিরেক্টর হাসি শুনে শাকিব কে অভিনয় টা করে দেখাতে বলল। একটু ঢিসুম ঢিসুম করেই শাকিব হয়ে গেল মুম্বাই সিনেমার হিরো। হা ভাই আর কোনো উপায় নাই, এতো সহজেই মুম্বাই সিনেমার হিরো হওয়া যায়। দু মিনিট শুটিং এর দৃশ্য দেখা গেল। দুই মিনিটের দৃশ্যে যা বুঝালাম পুরো সিনেমার শুটিং ওই রাস্তাটার ধারেই হয়েছে মানে এক জায়গাতেই গান, এক জায়গাতেই রোমান্স, এক জায়গাতেই ফাইট, এক জায়গাতেই আবেগী ডায়ালগ ইত্যাদী।
এবার দেখলাম একটা দেয়ালে লেখা “This is our mumbai city” দেয়াল টিতে রা-ওয়ান, শোলে, এম এল এ ফাটাকেস্ট সহ আরো কয়েকটি সিনেমার হল পোস্টার। মানে ডিরেক্টর এফডিসির কোনো এক ফ্লোর কে এভাবে সাজিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন এটাই মুম্বাই সিটি। সিনেমায় এতো কাটপিস ব্যবহার করা হয়েছে যা ধরতে পারলে আপ্নিই ভিড়মি খাবেন। এবার দেখলাম সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার একটি দৃশ্য যেখানে ভিলেন রা ভিড়ের মাঝে কারো পিছু নিয়েছে। শাকিব আর সাহারা রাজপথ থেকে পেছনে তাকিয়ে ভিলেন দের গতিবিধি লক্ষ্য করে পালিয়ে যাচ্ছে। ওরে বাপরে! তারা হেটেই পাহাড়ি এলাকায় চলে এলো। কিন্তু আমার জানামতে মুম্বাই মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপ। শহর থেকে হেটে এমন পাহাড়ি এলাকায় চলে আসা মানতে পারলাম না তবুও মানলাম। এবার শুরু হল গান। গানে সাহারা যখন শাকিবের সামনে আসছিল আমি পেছনে শাকিব কে খুজে পাচ্ছিলাম না
গান শেষে দেখা গেল তারা বর্ডারের কাছে চলে এসেছে। বর্ডার পার হয়ে বাংলাদেশেও চলে এলো। আমি তো টাস্কিত(!) নদিয়া, কোলকাতা না, ডাইরেক্ট মুম্বাই থেকে হেটে তারা বাংলাদেশে চলে এলো। পারোও বটে গুরু। এদিকে কাবিলা ঢাকায় চলে এসেছে। শাকিব কাবিলা কে ফোন দিলো। কিন্তু এই পুরো বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকল না। হিসাব অনুযায়ী শাকিব ভারতীয় সিম বাংলাদেশে এনে কাবিলা কে ফোন দিয়েছে । কাবিলার বাংলাদেশি নাম্বার কিভাবে পেলেন তাও প্রশ্নবোধক। তিনি আদৌ কাবিলার বাংলাদেশি নাম্বারে ফোন দিয়েছিলেন কিনা তাও প্রশ্নবোধক।
এবার শাকিব সাহারা কে বলল “আমি ঢাকার বাড্ডা নামক গ্রামে যাবো” বাড্ডা গ্রাম(!) বড্ডা গ্রাম(!!)
বাড্ডা গ্রামে দেখা গেলো একটা টং দোকানে লেখা “এখানে চা, কপি পাওয়া যায়”। মনে মনে বললাম “আপ্নারা মুম্বাই থেকে হেটে বাংলাদেশে এসেছেন একটু কপি খেয়ে জিরিয়ে নিন”
শাকিব কে যে পাচার করেছিল তার মেয়ে বনলতার জন্মদিন। লেখা দেখলাম “HAPPY BIRTHDAY BANLATA” ভাই noun এর ভুল নাই মানলাম, তাই বলে বনলতা কে মুরাদ টাক্লিও ভাবে BANLATA লিখবেন?
পার্কে BANLATA আর BANLATA’র কুকুর টমি ঘুরে বেড়াচ্ছে। উলালা উলালা গান শোনা গেল। বনলতার মুখ স্থির ছিল, টমি কে মুখ নাড়াতে দেখা গেল। গান টা কোন দিক থেকে আসছিল ইঙ্গিত পেলাম।
এক দৃশ্যে দেখলাম বনলতা কে তার তিন বান্ধবী বলে “তোর বাবা পাচারকারী”। বনলতা কাদতে কাদতে তার বাবার কাছে বিচার দেয়। এতে কিছু গুন্ডা সেই তিন টা মেয়েকে ধর্ষণ করে। এই দৃশ্য টা এতোটা দৃষ্টি কটু ভাবে না দেখালেও হত। মেয়ে তিন টা আত্মহত্যা করতে যাবে আর শাকিব এসে তাদের বাচায়। মেয়ে তিনটা বলে “আমাদের বেচে থেকে কি লাভ? আমাদের কে বিয়ে করবে? আপনি আমাদের বিয়ে করবেন?” শাকিব বলে “হ্যা আমি তোমাদের বিয়ে করব।“ বাউরে বাউ! শাকিব তো লোক সুবিধার না। একবারে চারটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে।
এবার শাকিবের সিনেমা “রোড মাস্টার”(হিন্দী তে লেখা ছিল কষ্ট করে পড়েছি) মুম্বাই তে রিলিজ হয়ে হিট হয়ে যায়। আমি তো ভাবছিলাম ডিরেক্টর মুম্বাইয়ের কথা ভুলেই গেছেন। আবার দেখলাম কাটপিসের ছড়াছড়ি। ডার্টি পিকচার সিনেমার হল থেকে পাইরেসি করার দৃশ্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। আর রোড মাস্টার সিনেমার সে আরেক অবস্থা। এই সিনেমার মাঝেও কাটপিস, কাটপিস দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ।
সামনে থেকে এক জোড়া কপোত কপোতি কে উঠে যেতে দেখলাম। মেয়েটা ছেলেটা কে বলছে “আর কোনোদিন যদি আমাকে বাংলা সিনেমা দেখাতে নিয়ে এসেছ তবে খবর আছে” ছেলেটা আমাকে বলল “একা একা বসে কি দেখছেন? চলেন ভাই” আমি বললাম “অনেকদিন আমার মাথাটা বরফের মত জমে আছে। সিনেমা দেখে বরফ কে বাষ্প করছি”
আমি যে সারিতে বসে ছিলাম সেই সারি, সামনের কিছু সারি, পেছনের কিছু সারি সব ফাকা ছিল। কেমন যেন ভুতুড়ে পরিবেশে বাকি সিনেমা দেখলাম।
জাহাজের ভিতর ভিলেন দের সাথে শাকিবের ফাইট হল। চারজন কসাই চাপাতি নিয়ে শাকিবের উপর আক্রমন করল। শাকিব চাপাতি গুলো কে শূন্যে ছুড়ে দিল। একটা #চাপাতি শাকিবের হাতে ফিরে এলো, বাকি তিনটা কোথায় গেলো জানিনা। চাপাতি দিয়ে শাকিব সবার হাত কাটা শুরু করলেন। হাত কাটার পর সবার অনুভূতি কিছুই না। নো চিল্লানি, যেন শাকিব চুল কেটে নিয়েছে তাদের। আর চিল্লাবেই বা কিভাবে? হাত কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হল অথচ মাটিতে এক ফোটা রক্তও পড়তে দেখা গেল না। দারুন ব্যপার। আরো মজার ব্যপার –হাত কাটার পর পরই শরীরের ডান বাম পাশ টা ত্রিভুজের মত ফুলে উঠেছে। জামার ভিতরে হাত গুটিয়ে রাখা এতো স্পষ্ট কেন তা বুঝতে চাইলাম না। শাকিবের সিনেমা দেখব আর আশ্চরয সব দৃশ্য দেখব না তা কি হয়!
শেষ দৃশ্যে দেখা গেলো শাকিবের হুবুহু একটা পুতুল তৈরি করা হল(সম্ভবত #মোম দিয়ে) আর সেটা ভিলেন দের কাছে হস্তান্তর করা হল। কিন্তু কি আশ্চরয কি আশ্চরয! পুতুল হেটে হেটে ভিলেন দের কাছে গেলো ভিলেন রা তাকে গুলি করল রক্ত পড়ল। পুতুলের উপর নিশ্চয়ই কালো জাদুর প্রভাব পড়েছিল।
আপনি যদি প্রেশারের রোগী হন তবে সিনেমা টা দেখবেন না, প্রেশার বেড়ে যাবে। আপনি হার্টের রোগী হলে হার্ট এটাক হবে। গারলফ্রেন্ডের সাথে দেখতে গেলে আপনার ব্রেক আপ হবে। আত্মহত্যা প্রবন হলে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হবে। এই সিনেমা দেখলে আপনি মনপুরার কথা ভুলে যাবেন। তাই আপনাদের বলব রিস্ক নেয়ার দরকার নেই। আর সিরিয়াসলি একটা কথা বলতে চাই, এধরণের সিনেমা বয়কট করুন। এধরনের সিনেমা বয়কট না করলে ডিরেক্টর আবার এমন সিনেমা বানাবে। চলচ্চিত্রে যে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে তা অচিরেই শেষ হওয়ার ঝুকি রাখে এসব সিনেমার জন্য। শাকিব আবারও প্রমান করলেন একমাত্র একমাত্র একমাত্র তার দ্বারাই সম্ভব। গরুর গোবর দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি হয়, ডিরেক্টরের মগজ দিয়ে...............।.।