যদিও সিনেমাটা কিছু দিন আগের কিন্তু মজা তো সবসময়ই নেয়া যায় .। তাই লিখলাম রিভিউ টা .। রিভিউ বলতে যা দেখেছি তাই লিখছি .।
আমার লাইফে সিনেমা দেখতে গিয়ে এতো মজা কোনদিন করিনি। চেয়ারের উপর দুই পা
তুলে দিয়ে কুটুম হয়ে বসে উপভোগ করলাম শাকিবের ভালোবাসা আজকাল।
সিনেমার শুরুতেই বিয়ে বাড়ির দৃশ্য। বিয়ে বাড়িতে দেখা গেল কাবিলা কে, যে
কিনা তার এক সহকারী কে বারে বারে বিয়ে করায় । সহকারী বাসর রাতে কনেকে দুধের
সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গয়না চুরি করে। তাও যেই সেই ঘুমের ওষুধ না।
খাওয়ানোর সাথে সাথে একশন(!), আবার গয়না চুরি হয়ে গেলেই একশন ফুরিয়ে যায়। এই
ওষুধের নাম দেয়া যায় কারযসিদ্ধি ওষুধ
হঠাতই টাশকি খাওয়ার মত দৃশ্য! জ্বী ভাই আমি সহ হলের সবাই টাশকিই খেয়েছিল
নায়কের আবির্ভাবে।
গ্রামের একদল বখাটে মেয়ে আমাদের নায়ক কে তাড়া করতে করতে
নিয়ে যায়। সে কি তাড়া! দেখার মত দৃশ্য। ভাগ্যিস অন্যান্য সিনেমায় বখাটেরা
মেয়েদের তাড়া করে যেমনটা করে তেমন কিছু ঘটেনি। ঘটলে(?) আমার দোস্ত বলে উঠল
“দোস্ত শাকিব কেস না করলে আমি কেস করুম, এডাম টিজিং এর এই ইস্যু হাতছাড়া
করা যাইবো না”
শাকিব মায়ের মাথায় হাত রেখে কসম করে কাবিলার সাথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
প্রথম দিকে শাকিব কাবিলার কথা মত কাজ করতে রাজি না হলেও কাবিলা যখন শাকিব
কে কসম এর কথা মনে করিয়ে দিল তখন শাকিবের অবস্থা আর আবহ সঙ্গীত দেখে আমাদের
চোখেও পানি চলে এলো (!)। আপ্নার চোখেও আসবে সিওর
এবার নিঃস্বার্থ ঘটক খোজ দিলো বড়লোকের মেয়ে মিস চুমির। ডিরেক্টর এর
তেলেসমাতিতে গ্রামের ছেলে শাকিব হেভি ড্রাইভিং করে এয়ারপোর্টে গেলেন মিস
চুমি কে আনতে। এতোক্ষনে দেখা মিলল নায়িকা মাহীর। যাকে কিনা ১৪ বছর হেভি
সিকিউরিটি দিয়ে এক ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল (সিকিউরিটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই)।
হেভি সিকিউরিটি কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাহি চলে এলো বাংলাদেশে। এই পরযায়ে
শাকিব কে দেখলাম “Mrs. & Miss Sumi” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা
করতে(!) আচ্ছা “Mrs. & Miss Sumi” দ্বারা কি বোঝায়? চুমি কি অর্ধেক
বিবাহিত আর অর্ধেক অবিবাহিত? ভাবনার বিষয়
মাহি এবারো সকলের চোখে ধুলা দিয়ে নকল মিস চুমি সেজে শাকিবের সাথে চলে এলো।
নায়িকার রুপ দেখে নায়ক অভিভুত, পুলকিত হবেনা তা কি হয়? মাহি কে বাসায় আনার
পর শাকিব যে এক্সপ্রেশান টা দিল তা আমার লাইফে দেখা বেস্ট। আপনি শুধু
এক্সপ্রেশান টা দেখার জন্য সিনেমা টা দেখতে পারেন। শাকিবের মোচড়ানী আর লাল
ঠোট দেখে পাশের থেকে বন্ধু বলে উঠলো “দোস্ত নায়ক কই গেল? :-o “ জ্বী ভাই,
ওই মোচড়ানি দাতাই আমাদের নায়ক
এরপর খাওয়া দাওয়া পরব। কিন্তু আমার দৃষ্টি ছিল ডাইনিং টেবিলের খাবারের দিকে
না, পেছনে কয়েকটা টিকটিকি দেখলাম। ডিরেক্টর সাহেব টিকটিকি গুলোকে ভাড়া
করেছেন কিনা কে জানে। এবার শুরু হল গান, গানের ভিতর ব্যবহৃত এতো ছোট ছোট
পিরামিড ডিরেক্টর সাহেব কোথায় পেলেন বুঝতে পারলাম না। নাকি শাকিব মাহি কে
কোনো উপায়ে পিরামিডের সমান বানিয়ে দিলেন(!) নতুন আবিষ্কার
একটু পরে মাহি বলল “আমি ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখেছি বান্দরবানের কাছে একটা
পুরনো রাজবাড়ি আছে”। বুঝলাম না দেশে এতো রাজবাড়ি রেখে কি ইন্টারনেটে শুধু
বান্দরবানের বান্দর বাড়িই দেখায়? মনে হয় সার্ভারে প্রবলেম ছিল।
একটু পর দেখা যায় মাহি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মাহির খোজ দেয়ার
জন্য মাহির বাবা পেপারে বিজ্ঞাপন দেয়। সেই বিজ্ঞাপন দেখে মাহি কে গুন্ডা রা
তাড়া করে। হঠাত শাকিব কে দেখলাম বাশি বাজাতে। শাকিব কি নাইটগার্ড না
রেফারী যে সবসময় পকেটে বাশি থাকে? যাক আমরা একটা সব্যসাচী নায়ক পেলাম যে
কিনা পার্ট টাইম নাইটগার্ড আর রেফারীর জব করে।
বিরতির পর মাহি কে দেখালাম বান্দরবান নিয়ে যাওয়া হল। বুঝলাম না, মাহি কে
বেধে ঢাকা থেকে বান্দরবান কিভাবে আনা হল? মনে হয় তিনজন পিঠে পাখনা লাগিয়ে
আকাশ দিয়ে উড়ে এসেছে। কাবিলা এখনো শাকিব কে শাকিবের মায়ের কসম দিয়ে আটকিয়ে
রেখেছেন। টিস্যু পেপার নিয়ে যাবেন। কসমের কথা মনে করিয়ে দিলে যে আবহ সঙ্গীত
আর শাকিবের যে মুখের চেহারা হয় তাতে আপনারই কান্না চলে আসবে
হঠাতই ফোন এলো শাকিবের মা মারা গেছেন। শাকিব ম্যারাথন দৌড় দিয়ে বান্দরবান
থেকে তার মায়ের বাড়িতে চলে এলেন। কিন্তু একি! সিনেমার প্রথম দৃশ্যে দেখা
গেলো শাকিবদের পাকা বাড়ি! পারেও বটে। শাকিব কে যেন নেক্সট অলিম্পিকে
পার্টিসিপেট করানো হয়। দিনের দিনই শাকিব কে তার মায়ের কবরে মাটি দিয়ে ফিরে
আসতে দেখা গেলো। শাকিব কে খালি দৌড়াতেই দেখলাম
এবার নায়ক মাহি কে উদ্ধার করল কাবিলার কারাগার থেকে। ওমা একি! কি সুন্দর
জোনাকি! মাহির আবদারে শাকিব পানিতে নেমে পড়লেন জোনাকি ধরতে(ডাঙ্গায়ও জোনাকি
ছিল)। জোনাকি ধরার সেকি ইশটাইল! আমি ভাবছি শাকিব কি পানিতে নেমে মশা
মারছে? অনেক কষ্টে শাকিবের হাতে ধরা দিল জোনাকি। আজব ব্যাপার। জোনাকি গুলো
শাকিবের হাতে আসতেই আলো বেড়ে গেলো ১০০ গুন। জোনাকি পোকা ফ্লাশ মারছে। লাইফে
এই ফার্স্ট ফ্লাশ মারা জোনাকি দেখলাম। ডোন্ট মিস ইট। জীবনে অনেক কিছু
দেখতে পাবেন কিন্তু ফ্লাশ মারা জোনাকী দেখতে পাবেন না
এক দৃশ্যে দেখলাম মাহি বলছে “মনে হয় বৃষ্টি আসবে” । কিন্তু “বৃষ্টি” বলার
আগেই ডিরেক্টর এনিমেটেড বৃষ্টি দিয়ে দিলেন। অথচ নায়ক নায়িকা টের পেলেন না
বৃষ্টি পড়ছে(!) বৃষ্টিতে যখন ভিজে দুজনেই চপচপে তখন শাকিব নিয়ে আসলো একটা
কচু পাতা(!) এইবার এক কচুপাতা দিয়া দুইজন বৃষ্টি ঠেকা।
কিছু ট্রাক চালক পেপারে মাহির খোজ দেয়ার বিজ্ঞাপন টি দেখছে। ভাল করে খেয়াল
করলাম খোজ দেয়ার জন্য ০১৭৩৭৩৬৬০** এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আমি
সাথে সাথে ফোন দিয়ে বললাম “আমি মাহি কে ধরিয়ে দিতে পারব, ১৫লাখ আপনার আর
১৫লাখ আমার” । উত্তর আসলো “আপনি কেডা?”। অতঃপর লাইনটা কেটে গেলো। আমার আর
১৫লাখ পাওয়া হল না
এক দৃশ্যে শাকিব মাহিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে পালাচ্ছেন। ভিলেন রাও তাদের পিছু
তাড়া করেছে। একসময় শাকিব ত্রিমুখি রাস্তার মোড়ে মোটরসাইকেল পার্ক করল। আর
আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল “মোটরসাইকেল এখানে পার্ক করা দেখে ওরা ভাববে আমরা
ওই পথে চলে গেছি(কি আত্মবিশ্বাস!)। তাই বলে তারা অন্য পথে চলে গেল। আপনি
তিন রাস্তার মোড়ে মোটর সাইকেল রেখে ভাববেন “আমি এই পথে চলে যাই, ওরা ভাববে
আমি অন্য পথে গেছি”। পারবেন তো ভাবতে? সবচেয়ে বড় কথা কোন আবুল মোটর সাইকেল
রেখে হেটে যায়?
শাকিব আর মাহি ঘুরতে ঘুরতে তাদের কাঙ্ক্ষিত রাজবাড়ির কাছে চলে এসেছে। শাকিব
ভেতরে দেখতে গেলেন কোনো সাপ টাপ আছে কিনা। কিন্তু একি! শাকিব উপস্থিত
হওয়ার সাথে সাথে আলিরাজ তার টেপ রেকর্ডার চালু করলেন। যদিও শিবা জানত তিনি
মাহির আসল বাবা না, তবুও শাকিব কে শোনানোর জন্য অকপটে আবার সব বললেন।
আশ্চরযের বিষয় আলিরাজ যদি মাহির আসল বাবা নাই হন তবে সিনেমার শুরুতে তিনি
বাবা হিসেবে যে কান্নাটা করেছিলেন তা বড্ড #বেমানান। গোপন কথা শুনে
ফেলার অপরাধে শাকিব কে মেরে অজ্ঞান করে ফেলা হল। শাকিব কে গাড়িতে বসিয়ে
অভিনব কায়দায় দেখানো হল শাকিব মাহি কে ধোকা দিচ্ছে। তার জন্য শাকিবের হাত
টা কে ধরে টাটা দেয়া হল। কিন্তু অজ্ঞান হলে যে কব্জি টাটা দেয়ার মত সোজা
থাকে তা হয়ত আপ্নারাও প্রথম দেখবেন।
মাহি একটা স্বপ্ন দেখে প্রায়ই। স্বপ্ন টা সিনেমায় ইনভার্ট বা নেগেটিভ ভিডিও
হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। সিনেমার শেষে এসে স্বপ্ন টা রঙ্গিন হয়ে যায়। কিন্তু
কি আশ্চরয! মাহি কে যে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে তাকে এতোকাল স্বপ্নে দেখা
যায়নি, কিন্তু এখন মাহি একই স্বপ্নে তাকে দেখে ফেলে। পেছন থেকে চেপে ধরা
#লোকটাকে কিভাবে দেখে ফেলল তা ভাবনার বিষয়। মাহির কি পেছনে চোখ লাগানো
ছিল নাকি ক্যামেরার সাথে চোখ লাগানো ছিল তা বুঝতে পারলাম না।
এবার নায়িকা কে জিম্মি করে সব সম্পত্তি লিখে নেয়ার পালা। না না এটা আর দশটা
বাংলা সিনেমার মত না। এখানেও ব্যাতিক্রম আছে। নায়িকার বাবা কে যে
চুক্তিপত্রে সই করতে বলা হল খোদার কসম সেটাতে তিনি উল্টা সই করলেন। ধরুন
চুক্তিপত্র টা আমি আমার দিক থেকে সোজা করে ধরে আছি। নায়িকার বাবা আমার
বিপরিতে বসে আছে। তিনি ওই ভাবেই সই করে দিলেন। অর্থাৎ সই টা করলেন
চুক্তিপত্রের উপরে বাম দিকে তাও আবার উল্টা। মাথায় বুদ্ধি আছে বস
হঠাতই নায়কের আগমন, সাই সুই করে কিছু মারামারি অতঃপর নায়কের পেটে ছুরি।
ব্যাপার নাহ, নায়ক কখনো মরে না। নায়িকা কা কে দেয়া কিছু ঔষধি পাতা নায়িকার
পকেটে এতোদিন পরও যে তাজা থাকবে তা ছিল আমার ভাবনার বাইরে। মনে হয় নায়িকার
পকেটে ফ্রিজের সুবিধাদি ছিল। তিনি গাছ গুলো নায়কের পেটে গুজে দিলেন আর নায়ক
সুস্থ হয়ে উঠলেন (!) ভাবুন(!)। উল্লেখ্য নায়ক নায়িকা বেশ কিছুক্ষন আবেগি
আলাপ করলেন, ভিলেন রা সেইসময় আমাদের মত টিকেট কেটে তাদের আবেগী ডায়ালগ
শুনছিলেন। নায়ক একটা কুড়াল জোগাড় করে সপাত সপাত কোপাতে লাগলেন। একসময়
শুণ্যে কয়টা চক্কর দিলেন। শুণ্যে #চক্কর দেয়ার জন্যও তাকে অলিম্পিকে
পাঠানো উচিত। শুণ্যে চক্কর দেয়া শেষে অভিনব কায়দায় চেয়ার নিয়ে বসলেন
ভিলেনের উপরে। হঠাত নায়ক পেছন থেকে কুড়াল বের করলেন। তার মানে নায়ক এতক্ষন
পিঠে কুড়াল নিয়ে শুণ্যে ঘুরছিলেন! কিন্তু শুণ্যে ঘোরার সময় তো কোনো কুড়াল
ছিলো না তার পিঠে। যদি থেকেও থাকে তবে তা কিভাবে? আমার মনে হয় নায়ক ম্যাজিক
জানে। আমরা একটা জাদুকর নায়ক পেয়েছি যে কিনা আমাদের নিত্য নতুন জাদু
দেখিয়ে যাচ্ছে।
আপ্নেরা সিনেমাটা যদি না দেখেন তবে পুরাই মিস। সিনেমা দেখুন, মজা নিন আর চামের উপ্রে সিনেমা টা হিট করে দিন