গাজীপুরে বন্ধুর বাড়ি আসার পর প্রথম অভিজ্ঞতাটা মোটেও ভাল হয়নি সংগ্রামের ।
অতিথি কে চোর বলে পেটালে অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর হওয়ার কথা নয় । সব এই দস্যি
মেয়ে সুনয়নার জন্য হয়েছে । সুনয়না তো নয় আসলে কুনয়না হবে । একের পর এক
অঘটন ঘটিয়েই চলেছে । এমন দস্যি মেয়ে বাপের জনমেও দেখেনি সংগ্রাম। উফ চোর
সাজিয়ে কি মার টাই না খাওয়ালো সবার কাছে । সিনেমা হলে গিয়েও মেয়েটা
গ্যাঞ্জাম পাকালো । সিনেমা হলের দর্শকদের ভিতর মারামারি বাধিয়ে দিয়েছে ।
উল্টো সংগ্রাম কে হুমকি দিয়ে রেখেছে এই কথা বাড়িতে জানালে তারও ঠ্যাং
ভেঙ্গে দেবে ।
সিগারেটের নেশায় সংগ্রামের মাথা ঠিক নেই । কিন্তু তার বন্ধুর বাড়িতে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে । তাই এখানে সিগারেট খাওয়া নিষেধ । বন্ধুর কথা মত সংগ্রাম বাড়ির পাশে তালতলায় চলে যায় সিগারেট টানতে । কিন্তু তালতলায় এসেই সংগ্রামের চোখ ছানাবড়া ।
-তুমি সিগারেট খাচ্ছো!?
*খাচ্ছি না । পা----ন করছি ।
সংগ্রামের মুখে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে কথাগুলো বলে সুনয়না । একটা গ্রামের মেয়ে যে এভাবে সিগারেট টানছে তা বিশ্বাস হচ্ছে না সংগ্রামের । কিন্তু হঠাতই সুনয়নার বাবা চলে আসায় সংগ্রামের হাতে সিগারেট টা ধরিয়ে পালিয়ে যায় সুনয়না । এ সাক্ষাত ফুলনদেবী যেন সংগ্রাম কে বিপদে ফেলানোর জন্যই এর জন্ম হয়েছে ।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যায় । সংগ্রামের বন্ধুরও বিয়ে হয়ে যায় । কিন্তু দস্যি মেয়েটার পাগলামী কমে না । আজ সারা বাড়ি পোস্টারিং করেছে "সুনয়না লাভ(প্রতিক) সংগ্রাম" । কি সাংঘাতিক ব্যপার! পোস্টার ছিড়তে ছিড়তে সুনয়নার বাবার সামনে পড়ে যায় সংগ্রাম ।
-তোমার হাতে ওগুলো কিসের কাগজ ?
*জ্বী জ্বী মানে … বাচ্চাদের গণতন্ত্র চর্চা করাচ্ছি ।
ইতস্তত ভাবে জবাব দেয় সংগ্রাম ।
এদিকে হঠাতই সংগ্রামের মায়ের ফোন আসে । সংগ্রামকে এখনি ময়মনসিংহ যেতে হবে । উল্লেখ্য সংগ্রামের মা ময়মনসিংহের পৌরসভার চেয়ারম্যান ।
সংগ্রাম সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় । এদিকে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায় সুনয়না । সে এখনো জানেইনা সংগ্রাম তাকে ভালবাসে কিনা । কিন্তু সংগ্রামের আর ময়মনসিংহ যাওয়া হয়না । এলাকার ত্রাস লাল ভাই অনির্দিষ্ট কালের জন্য এলাকায় হরতাল ডাকে । কোন গাড়িই এলাকা থেকে বেরুতে পারবে না । তাই আবার ফিরে আসে সংগ্রাম । এবার সুনয়নার কান্না অটোমেটিক খুশিতে কনভার্ট হয়ে যায় ।
সুনয়নার চুড়ি ভরা হাত ধরে টান দেয়ার ফলে সুনয়নার হাত কেটে রক্ত ঝরছে । সংগ্রামের এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি । অযথা হাত টা কেটে গেল, তাই সংগ্রাম নিজেও নিজের হাত কেটে ফেলে । সুনয়না নিজের রক্তের সাথে সংগ্রামের রক্ত মিশিয়ে দেয় । লাল রক্তের সাথে লাল রক্ত । মনের সাথে মন ।
লাল ভাই সুনয়নার বাবাকে হুমকি দিয়েছে । পত্রিকা অফিস বরাবর লালের বিরুদ্ধে লেখা চিঠিটা লালের হাতেই পৌছে যায় । লালের হুমকিতে অসুস্থ হয়ে যায় সুনয়নার বাবা । কিন্তু ওষুধ না থাকায় বিপত্তি ঘটে । এদিকে হরতালের কারনে সব দোকান পাট বন্ধ থাকে । ওষুধ আনার দায়িত্ব সংগ্রাম নিজের কাধে তুলে নেয় । হরতাল না মেনে ফার্মেসী থেকে ওষুধ নেয়ার কারনে লাল আর লাল বাহিনীর সাথে সংগ্রামের ফাইট হয় । লাল কে মেরে সংগ্রাম অর্ধ উলঙ্গ করে দেয় । এই মারামারির দৃশ্য কেউ একজন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় । লাল সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে বলে সুনয়নার পরিবার সংগ্রাম কে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় ।
সুনয়না কে রক্তাক্ত অবস্থায় ময়মনসিংহের রাস্তায় পাওয়া যায় । অবেশেষে সংগ্রামের মা তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয় । সংগ্রাম যখন ডাইনিং এ যায় তখন সুনয়না কে দেখে চমকে ওঠে । ও কিভাবে তার বাড়িতে ? কিন্তু সুনয়নার চোখের ভাষা তাকে ভয় পাইয়ে দেয় । সেই রাতেই সুনয়না বটি নিয়ে সংগ্রাম কে আক্রমন করতে যায় । সংগ্রাম কিছুই বুঝতে পারেনা । শুধু নিজেকে সুনয়নার কাছ থেকে রক্ষা করে চলে । এক পর্যায়ে সুনয়না কে সে শান্ত করে ।
সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য লাল সুনয়নার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে । সংগ্রামের কারনে তার পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ায় সে সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নিতে আসে ।
সংগ্রামের বাড়িতে লাল বাহিনী আক্রমন করে । কিন্তু এ যাত্রায় সংগ্রামের প্যাদানি আর গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে লাল পালিয়ে যায় । রাতের আধারে গ্রামের বেশ কয়েকটা বাচ্চা কে লাল তুলে নিয়ে যায় । বাচ্চার বিনিময়ে দাবি করে সংগ্রাম কে । সংগ্রামের মা শিশু বাচ্চাদের কথা ভেবে নিজের ছেলেকে লালের হাতে তুলে দেয় । লাল সংগ্রামের মা, বোন আর সুনয়নার গলায় অস্ত্র ধরে সংগ্রাম কে পেটাতে থাকে আর তা ক্যামেরাম্যান দিয়ে ভিডিও করে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংগ্রামেরই জয় হয় ।
সংগ্রাম চরিত্রে অভিনয় করে বাপ্পী আর সুনয়না চরিত্রে মাহী ।
যা ভালো লাগেনি :
আমার দৃষ্টিতে সিনেমার নামকরন অনুযায়ী পুরো সিনেমায় রোমান্টিকতার অভাব ছিল । নায়ক নায়িকার প্রেম কিভাবে হয় এবং কেন হয় তা দর্শক ভালভাবে ধরতে পারেনি । এটা কাহিনীকার ও পরিচালকের ব্যর্থতা বলব। এক দৃশ্যে ডাবিংএর কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে । কথা শোনা যাচ্ছিল অথচ সোহেল রানার (সুনয়নার বাবা) মুখ নড়ছিল না । সম্ভবত মুখ নড়ছিল না । সম্ভবত মুখ বুজে কথা বলছিলেন । মাহীর হাত ধরে টান দেওয়ার সময় চুড়ি ভেঙ্গে মাহীর হাত কেটে গিয়েছিল । বাপ্পীও ইচ্ছা করে হাত কাটে । অনেক রক্ত পড়েছিল, কিন্তু ঠিক কি ধরনের চিকিতসা নিয়ে এক রাতের মাঝে হাত কাটার সমস্ত চিহ্ন হারিয়ে গেল তা জানার ইচ্ছা ছিল । অমিত হাসান (লাল) যখন ফোনে সোহেল রানাকে হুমকি দেয় তখন ছিল রাত । অথচ সোহেল রানার ওখানে ছিল দিন । গাজীপুরের দুইটা এলাকা পৃথিবীর দুই প্রান্তে চলে গেল কিনা তা ছিল ভাববার বিষয় ।
হরতালের মাঝে ওষুধ আনতে গিয়ে বাপ্পী ফার্মেসী তে ঢুকল কিভাবে আর ঢুকেছেই যেহেতু তবে সাটার কেটে বের হওয়া লাগলো কেন তা বোধগম্য নয় । বাপ্পীর মা কে ভিলেন রা মারার জন্য প্রথমে ভ্যানে বেধে ফেলে এবং একজন ভ্যানের উপর উঠে অস্ত্র নিয়ে শাসাতে থাকে । পেছনে পেছনে আসতে থাকে ভিলেন দের ট্রাক ও মোটর বাইক বহর । বুঝলাম না, যদি মারারই ইচ্ছা থাকে তবে ভ্যানে বেধে এতোকিছু করার কি দরকার । এবার বাপ্পী উড়ে এসে ভ্যান এর নিয়ন্ত্রন নেয় এবং দ্রুত চালিয়ে সামনে থাকা ট্রাককে ধরে ফেলে(!) সেই ট্রাকে ছিল গাছের গুড়ি । একেক টা গুড়ির আঘাতে ভিলেন দের ট্রাক বিস্ফোরিত হতে থাকে . মনে হয় গাছের গুড়িতে বোমা ছিল(!) বাপ্পী যখন ভ্যান থেকে পড়ে যায় তখন গতিজড়তার কারনে ভ্যান টিকে সামনের দিকে যাওয়ার কথা । কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞান কে ভুল প্রমান করার জন্য ভ্যান টি পেছনের দিকে যেতে থাকে এবং মোড় নিয়ে বাধের ঢালু পথে নেমে যায় । কিন্তু সামনের চাকার পেছনের দিক একটি পাথরের সাথে আটকে যায় আর তাতেই ভ্যান টা থেমে যায় (!) সব অপদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র । অবশেষে বাপ্পী একটি দড়ি (দড়ি পেল কোথায়?) ছুড়ে মেরে ভ্যান টিকে তুলে আনে (!!!)
কোরিওগ্রাফি ভাল হয়নি ।
সিনেমায় দুই শিশু শিল্পীকে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত । তাদের মৃত্যু না ঘটালেও হত ।
শেষ দৃশ্যে বাপ্পী যখন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তখন তাকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে দিতির(বাপ্পীর মা) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেয়া মোটেও যুক্তিযুক্ত ছিল না । পৌরসভার চেয়ারম্যান তো তাই সব জায়গায় ভাষন ।
যা ভালো লেগেছে :
পুরো সিনেমায় অমিত হাসানের অভিনয় দর্শকদের প্রচুর বিনোদন দিয়েছে । অমিত হাসানের অর্ধ উলঙ্গ হওয়ার পরের অভিব্যক্তি দারুন ছিল । শেষ দৃশ্যে অমিত হাসানের "পাতা খামু পাতা খামু, আমারে ছাগল পাইছে" এই বলে গাছের পাতা ছিড়ে ফেলার দৃশ্যটা ফাটাফাটি । মাহীর সিগারেট টানার দৃশ্য এবং এর পরবর্তী দৃশ্য উপভোগ্য ছিল । গান গুলোর চিত্রায়ন ভাল ছিল বিশেষ করে "তুমি আছো নজরে নজরে" গানটার চিত্রায়ন আসলেই অনেক ভাল হয়েছে । মাহীকে এই গানে কালো পোষাকে খুব সুন্দর লাগছিল বলা যায় মাহীর এযাবতকালের সেরা লুক । ব্যাকগ্রাউন্ড দর্শকদের ব্যবহার টাও কিছুটা ভাল ভাবেই হয়েছে । অন্যান্য সিনেমায় এই উতসুক জনতা কে স্ক্রিনে দেখানো খুবই দৃষ্টিকটু লাগত ।
সর্বোপরি কিছু ভুল ত্রুটি থাকলেও সিনেমাটা দেখা যায় । ভুল ত্রুটি অন্যান্য সিনেমার তুলনায় কম তাই সিনেমাটা দেখা উচিত ।
সিগারেটের নেশায় সংগ্রামের মাথা ঠিক নেই । কিন্তু তার বন্ধুর বাড়িতে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে । তাই এখানে সিগারেট খাওয়া নিষেধ । বন্ধুর কথা মত সংগ্রাম বাড়ির পাশে তালতলায় চলে যায় সিগারেট টানতে । কিন্তু তালতলায় এসেই সংগ্রামের চোখ ছানাবড়া ।
-তুমি সিগারেট খাচ্ছো!?
*খাচ্ছি না । পা----ন করছি ।
সংগ্রামের মুখে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে কথাগুলো বলে সুনয়না । একটা গ্রামের মেয়ে যে এভাবে সিগারেট টানছে তা বিশ্বাস হচ্ছে না সংগ্রামের । কিন্তু হঠাতই সুনয়নার বাবা চলে আসায় সংগ্রামের হাতে সিগারেট টা ধরিয়ে পালিয়ে যায় সুনয়না । এ সাক্ষাত ফুলনদেবী যেন সংগ্রাম কে বিপদে ফেলানোর জন্যই এর জন্ম হয়েছে ।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যায় । সংগ্রামের বন্ধুরও বিয়ে হয়ে যায় । কিন্তু দস্যি মেয়েটার পাগলামী কমে না । আজ সারা বাড়ি পোস্টারিং করেছে "সুনয়না লাভ(প্রতিক) সংগ্রাম" । কি সাংঘাতিক ব্যপার! পোস্টার ছিড়তে ছিড়তে সুনয়নার বাবার সামনে পড়ে যায় সংগ্রাম ।
-তোমার হাতে ওগুলো কিসের কাগজ ?
*জ্বী জ্বী মানে … বাচ্চাদের গণতন্ত্র চর্চা করাচ্ছি ।
ইতস্তত ভাবে জবাব দেয় সংগ্রাম ।
এদিকে হঠাতই সংগ্রামের মায়ের ফোন আসে । সংগ্রামকে এখনি ময়মনসিংহ যেতে হবে । উল্লেখ্য সংগ্রামের মা ময়মনসিংহের পৌরসভার চেয়ারম্যান ।
সংগ্রাম সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় । এদিকে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায় সুনয়না । সে এখনো জানেইনা সংগ্রাম তাকে ভালবাসে কিনা । কিন্তু সংগ্রামের আর ময়মনসিংহ যাওয়া হয়না । এলাকার ত্রাস লাল ভাই অনির্দিষ্ট কালের জন্য এলাকায় হরতাল ডাকে । কোন গাড়িই এলাকা থেকে বেরুতে পারবে না । তাই আবার ফিরে আসে সংগ্রাম । এবার সুনয়নার কান্না অটোমেটিক খুশিতে কনভার্ট হয়ে যায় ।
সুনয়নার চুড়ি ভরা হাত ধরে টান দেয়ার ফলে সুনয়নার হাত কেটে রক্ত ঝরছে । সংগ্রামের এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি । অযথা হাত টা কেটে গেল, তাই সংগ্রাম নিজেও নিজের হাত কেটে ফেলে । সুনয়না নিজের রক্তের সাথে সংগ্রামের রক্ত মিশিয়ে দেয় । লাল রক্তের সাথে লাল রক্ত । মনের সাথে মন ।
লাল ভাই সুনয়নার বাবাকে হুমকি দিয়েছে । পত্রিকা অফিস বরাবর লালের বিরুদ্ধে লেখা চিঠিটা লালের হাতেই পৌছে যায় । লালের হুমকিতে অসুস্থ হয়ে যায় সুনয়নার বাবা । কিন্তু ওষুধ না থাকায় বিপত্তি ঘটে । এদিকে হরতালের কারনে সব দোকান পাট বন্ধ থাকে । ওষুধ আনার দায়িত্ব সংগ্রাম নিজের কাধে তুলে নেয় । হরতাল না মেনে ফার্মেসী থেকে ওষুধ নেয়ার কারনে লাল আর লাল বাহিনীর সাথে সংগ্রামের ফাইট হয় । লাল কে মেরে সংগ্রাম অর্ধ উলঙ্গ করে দেয় । এই মারামারির দৃশ্য কেউ একজন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় । লাল সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে বলে সুনয়নার পরিবার সংগ্রাম কে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় ।
সুনয়না কে রক্তাক্ত অবস্থায় ময়মনসিংহের রাস্তায় পাওয়া যায় । অবেশেষে সংগ্রামের মা তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয় । সংগ্রাম যখন ডাইনিং এ যায় তখন সুনয়না কে দেখে চমকে ওঠে । ও কিভাবে তার বাড়িতে ? কিন্তু সুনয়নার চোখের ভাষা তাকে ভয় পাইয়ে দেয় । সেই রাতেই সুনয়না বটি নিয়ে সংগ্রাম কে আক্রমন করতে যায় । সংগ্রাম কিছুই বুঝতে পারেনা । শুধু নিজেকে সুনয়নার কাছ থেকে রক্ষা করে চলে । এক পর্যায়ে সুনয়না কে সে শান্ত করে ।
সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য লাল সুনয়নার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে । সংগ্রামের কারনে তার পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ায় সে সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নিতে আসে ।
সংগ্রামের বাড়িতে লাল বাহিনী আক্রমন করে । কিন্তু এ যাত্রায় সংগ্রামের প্যাদানি আর গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে লাল পালিয়ে যায় । রাতের আধারে গ্রামের বেশ কয়েকটা বাচ্চা কে লাল তুলে নিয়ে যায় । বাচ্চার বিনিময়ে দাবি করে সংগ্রাম কে । সংগ্রামের মা শিশু বাচ্চাদের কথা ভেবে নিজের ছেলেকে লালের হাতে তুলে দেয় । লাল সংগ্রামের মা, বোন আর সুনয়নার গলায় অস্ত্র ধরে সংগ্রাম কে পেটাতে থাকে আর তা ক্যামেরাম্যান দিয়ে ভিডিও করে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংগ্রামেরই জয় হয় ।
সংগ্রাম চরিত্রে অভিনয় করে বাপ্পী আর সুনয়না চরিত্রে মাহী ।
যা ভালো লাগেনি :
আমার দৃষ্টিতে সিনেমার নামকরন অনুযায়ী পুরো সিনেমায় রোমান্টিকতার অভাব ছিল । নায়ক নায়িকার প্রেম কিভাবে হয় এবং কেন হয় তা দর্শক ভালভাবে ধরতে পারেনি । এটা কাহিনীকার ও পরিচালকের ব্যর্থতা বলব। এক দৃশ্যে ডাবিংএর কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে । কথা শোনা যাচ্ছিল অথচ সোহেল রানার (সুনয়নার বাবা) মুখ নড়ছিল না । সম্ভবত মুখ নড়ছিল না । সম্ভবত মুখ বুজে কথা বলছিলেন । মাহীর হাত ধরে টান দেওয়ার সময় চুড়ি ভেঙ্গে মাহীর হাত কেটে গিয়েছিল । বাপ্পীও ইচ্ছা করে হাত কাটে । অনেক রক্ত পড়েছিল, কিন্তু ঠিক কি ধরনের চিকিতসা নিয়ে এক রাতের মাঝে হাত কাটার সমস্ত চিহ্ন হারিয়ে গেল তা জানার ইচ্ছা ছিল । অমিত হাসান (লাল) যখন ফোনে সোহেল রানাকে হুমকি দেয় তখন ছিল রাত । অথচ সোহেল রানার ওখানে ছিল দিন । গাজীপুরের দুইটা এলাকা পৃথিবীর দুই প্রান্তে চলে গেল কিনা তা ছিল ভাববার বিষয় ।
হরতালের মাঝে ওষুধ আনতে গিয়ে বাপ্পী ফার্মেসী তে ঢুকল কিভাবে আর ঢুকেছেই যেহেতু তবে সাটার কেটে বের হওয়া লাগলো কেন তা বোধগম্য নয় । বাপ্পীর মা কে ভিলেন রা মারার জন্য প্রথমে ভ্যানে বেধে ফেলে এবং একজন ভ্যানের উপর উঠে অস্ত্র নিয়ে শাসাতে থাকে । পেছনে পেছনে আসতে থাকে ভিলেন দের ট্রাক ও মোটর বাইক বহর । বুঝলাম না, যদি মারারই ইচ্ছা থাকে তবে ভ্যানে বেধে এতোকিছু করার কি দরকার । এবার বাপ্পী উড়ে এসে ভ্যান এর নিয়ন্ত্রন নেয় এবং দ্রুত চালিয়ে সামনে থাকা ট্রাককে ধরে ফেলে(!) সেই ট্রাকে ছিল গাছের গুড়ি । একেক টা গুড়ির আঘাতে ভিলেন দের ট্রাক বিস্ফোরিত হতে থাকে . মনে হয় গাছের গুড়িতে বোমা ছিল(!) বাপ্পী যখন ভ্যান থেকে পড়ে যায় তখন গতিজড়তার কারনে ভ্যান টিকে সামনের দিকে যাওয়ার কথা । কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞান কে ভুল প্রমান করার জন্য ভ্যান টি পেছনের দিকে যেতে থাকে এবং মোড় নিয়ে বাধের ঢালু পথে নেমে যায় । কিন্তু সামনের চাকার পেছনের দিক একটি পাথরের সাথে আটকে যায় আর তাতেই ভ্যান টা থেমে যায় (!) সব অপদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র । অবশেষে বাপ্পী একটি দড়ি (দড়ি পেল কোথায়?) ছুড়ে মেরে ভ্যান টিকে তুলে আনে (!!!)
কোরিওগ্রাফি ভাল হয়নি ।
সিনেমায় দুই শিশু শিল্পীকে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত । তাদের মৃত্যু না ঘটালেও হত ।
শেষ দৃশ্যে বাপ্পী যখন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তখন তাকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে দিতির(বাপ্পীর মা) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেয়া মোটেও যুক্তিযুক্ত ছিল না । পৌরসভার চেয়ারম্যান তো তাই সব জায়গায় ভাষন ।
যা ভালো লেগেছে :
পুরো সিনেমায় অমিত হাসানের অভিনয় দর্শকদের প্রচুর বিনোদন দিয়েছে । অমিত হাসানের অর্ধ উলঙ্গ হওয়ার পরের অভিব্যক্তি দারুন ছিল । শেষ দৃশ্যে অমিত হাসানের "পাতা খামু পাতা খামু, আমারে ছাগল পাইছে" এই বলে গাছের পাতা ছিড়ে ফেলার দৃশ্যটা ফাটাফাটি । মাহীর সিগারেট টানার দৃশ্য এবং এর পরবর্তী দৃশ্য উপভোগ্য ছিল । গান গুলোর চিত্রায়ন ভাল ছিল বিশেষ করে "তুমি আছো নজরে নজরে" গানটার চিত্রায়ন আসলেই অনেক ভাল হয়েছে । মাহীকে এই গানে কালো পোষাকে খুব সুন্দর লাগছিল বলা যায় মাহীর এযাবতকালের সেরা লুক । ব্যাকগ্রাউন্ড দর্শকদের ব্যবহার টাও কিছুটা ভাল ভাবেই হয়েছে । অন্যান্য সিনেমায় এই উতসুক জনতা কে স্ক্রিনে দেখানো খুবই দৃষ্টিকটু লাগত ।
সর্বোপরি কিছু ভুল ত্রুটি থাকলেও সিনেমাটা দেখা যায় । ভুল ত্রুটি অন্যান্য সিনেমার তুলনায় কম তাই সিনেমাটা দেখা উচিত ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন